ধর্ম

বিচারের দিন আমলনামা দেখে বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে

দুনিয়ার জীবনের পর পরকালীন জীবন সুনিশ্চিত। আর মানুষের জন্য এ পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের অংশ। যদি কেউ পরকালে অবিশ্বাস করে তবে সে মুসলিম হতে পারবে না।

Advertisement

আল্লাহ মানুষের প্রতি অনেক দয়াবান। মানুষ যেন পরকালে বিচারের দিন আজাব বা গজবে পতিত না হয় সে জন্য কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেছেন। বিচারের বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেছেন। যাতে মানুষ কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা করে।

একান্তই যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় জীবন পরিচালনা করবে পরকালে বিচারের দিন তাদের অবস্থা কেমন হবে, তারা আল্লাহর কাছে কী কামনা করবে, সে বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। কেননা আল্লাহ মানুষের মনের গোপন কথাও জানেন

আল্লাহ তাআলা বলেন-يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوَءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَاللّهُ رَؤُوفُ بِالْعِبَادِঅনুবাদ : স্মরণ কর সে দিনকে যেদিন তোমরা প্রত্যেকেই যা কিছু ভাল কাজ করেছে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তা চোখের সামনে দেখতে পাবে। আর তখন সে কামনা করবে যে, যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হতো তবে খুবই ভালো হতো! আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩০)

Advertisement

আয়াত নাজিলের কারণসুরা আল-ইমরানের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে পরকালের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। কেয়ামতের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা সব বান্দাকে তার ভালো ও মন্দ কর্মসমূহ দেখাবেন। মানুষ বিচারের সেই দিন দুনিয়ায় করা কাজ সমূহ দেখতে চাইবে না, তা থেকে দূরে থাকতে চাইবে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে এ বিষয়ে আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। যাতে মানুষ অন্যায় ও খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভালো কাজে নিজেদের পরিচালিত করেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দাদের অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। পরকালেও যেন বান্দাদের প্রতি তিনি অনুগ্রহ ও দয়াশীল থাকতে পারেন সে জনই কুরআনে বার বার এ ঘটনা উল্লেখ করে বান্দাকে সতর্ক করেছেন।

আল্লাহ তাআলা কুরআনের এ আয়াতে বলছেন-‘সে দিনকে ভয় কর যেদিন প্রত্যেকটি মানুষ তার ভালো-মন্দ আমল নিজ চোখে দেখতে পাবে। সেদিন পাপীষ্ঠ লোকেরা এ আকাঙ্খা করবে যদি আমাদের নিন্দনীয় কাজগুলো আমাদের থেকে দূরে থাকতো। আমরা যদি এর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতাম।’

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-‘সে দিনকে স্মরণ কর যেদিন প্রত্যেকটি মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর কাফের অবিশ্বাসীরা সেদিন বলবে, হায় আফসোস! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম।’

Advertisement

অন্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন-‘আর স্মরণ কর সেদিনকে যে দিন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যাবে। তারপর সবাইকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে। আর তারা অত্যাচারিত হবে না।

সুতরাং মানুষের উচিত পরকালে আল্লাহর আদালতে হাজিরা দেয়ার ডাক আসার আগেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়া। কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহর ভালোবাসার দাম দেয়া। আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ও অনুগত হওয়া। আল্লাহর বিধান যথাযথ পালন করা। দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। কেননা সেদিন মানুষের অবস্থা হবে এমন-

‘সে দিনকে স্মরণ কর, যেদিন সব গোপন রহস্য উদঘাটিত হবে কিন্তু সেদিন (আল্লাহর শক্তি ছাড়া) কোনো শক্তি থাকবে না এবং (আল্লাহর সাহায্য ছাড়া) কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।’

বিচার দিনের সে কঠিন সময়ের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। যাতে মানুষ সতর্ক হয়ে যায়। নিজেদের কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত করেন। পরকালের আজাব থেকে নিজেদের বাঁচাতে হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-

হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকই তার প্রভুর সঙ্গে এভাবে কথা বলবে যে তাঁর মধ্যে আর তোমাদের মধ্যে কোনো ভাষ্যকার থাকবে না। থাকবে না কোনো আবরণ বা পর্দা। সে ব্যক্তি যখন ডান দিকে তাকাবে তখন শুধু তার আমল দেখবে যা সে (দুনিয়ায়) করেছিল। আর বাম দিকে তাকালেও সে তার কৃতকর্মই দেখবে। যখন সামনে তাকাবে তখন দেখবে (জাহান্নামের) আগুন। অতএব, তোমরা সে আগুন থেকে আত্মরক্ষার জন্য চেষ্টা কর। এমনকি এ উদ্দেশ্যে একটি খেজুরের টুকরা দিতে (দান করতে) পার তবে তাও দাও (দান কর)।’

হাদিসের আলোকে দুনিয়ায় যাবতীয় আমল ও ইবাদত-বন্দগির সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি দান খয়রাত করা। দান খয়রাতের মাধ্যমে পরকালের চির শান্তি ও মুক্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এ কারণেই আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন-

‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছেন তার নিজের পক্ষ থেকে যেন তোমরা পাপ কাজে লিপ্ত না হও, কেননা পাপ কাজের শাস্তি সুনিশ্চিত।’ আর আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়াবান।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের আলোকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি দান সাদকা করার তাওফিক দান করুন। বান্দার প্রতি বেশি বেশি অনুগ্রহ দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ