জাতীয়

মশক নিধন কর্মী নিয়োগেও রাজনীতি!

রাজধানীতে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের জরুরি মুহূর্তেও রাজনৈতিক বিবেচনায় মশক নিধন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে! সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডের মশক নিধনে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে প্রায় দেড় হাজারের মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওয়ার্ড কমিশনারদের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের শতকরা ৯০ জনেরই পরিচ্ছন্নতা কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ভবিষ্যতে চাকরি স্থায়ীকরণ হবে- এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হিসেবে পরিচিত এসব তরুণকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এখন মাঠপর্যায়ে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করতে গিয়ে এ ননির পুতুলরা কাজ করতে পারছেন না। দৈনিক ৫০০ টাকারও কম মজুরিতে তারা এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন! ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি কাজ ডেঙ্গু মশার লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম গতিশীল হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও আওয়ামী লীগের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সেলের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ মুহূর্তে পরিচ্ছন্ন কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন লোকজনকে নিয়োগ দেয়া উচিত। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আরও হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

Advertisement

সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত শুধু সরকারি হিসাবেই ৫৪ হাজার ৯৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে চলতি মাসের ১৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩৩৬ জন। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৪০ জন বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কয়েক হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও রোগতত্ত্ববিদ রয়েছেন। সেখানে ডিএনসিসিতে রয়েছে মাত্র দেড় শতাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী। রোগতত্ত্ববিদ নেই একজনও। জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশই পরিচ্ছন্নতার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Advertisement

তবে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা মনিটরিং সেলের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বৈঠক হয়। সেখানে মেয়র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সর্বাত্মক ডেঙ্গু মোকাবিলা করার। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি। আমাদের বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য কোনো জনবল নেই, পুরাতন ওয়ার্ডেও জনবল কম। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি, নতুন আরও কর্মী ও জনবল নেয়াও প্রক্রিয়াধীন। আমরা এখন থেকে সারা বছরই মশা নিয়ে কাজ করব। আমরা ইতোমধ্যে কীটতত্ত্ববিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করেছি।’

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) সাবেক পরিচালক আন্তর্জাতিক রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ডেঙ্গুর পিক সিজন নেমে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও কমাতে ডেঙ্গু প্রজননস্থল ধ্বংস করা জরুরি। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো ও লার্ভা ধ্বংস করতে পারলে প্রকোপ আরও কমে যাবে।’ তবে এর ব্যত্যয় ঘটলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এমইউ/এনডিএস/এমকেএইচ