দু’দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। সবাই এখন ব্যস্ত কুরবানির পশুর কেনার জন্য। হাটে হাটে ছুটে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। তারা যখন কুরবানির পশুর কেনার জন্য ব্যস্ত, ঠিক তখন এক শ্রেণির মানুষ তাকিয়ে থাকেন উচ্চবিত্তদের দিকে। প্রতিবছরই ঈদ আসে, ঈদ যায়- কিন্তু ঈদের যে আমেজ তা খুব কমই ধরা দেয় দরিদ্র মানুষগুলোর জীবনে। যেখানে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’; সেখানে কুরবানি দেয়ার কথা চিন্তা করা তো যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। তবু তাদের জীবনযুদ্ধ থেমে নেই। তারা স্বপ্ন দেখেন একদিন ঠিক তারা নিজ অর্থায়নে কুরবানি দেবেন। তবে এবারও বোধহয় কুরবানি দেয়া হবে না কিছু মানুষের।
Advertisement
ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব। ঘরে ঘরে তাই এখন উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে বিত্তবান, মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্তদের কুরবানির পশু কেনা নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকলেও দরিদ্র মানুষের মাঝে নেই এর উত্তাপ। অর্থের জন্য কিনতে পারেন না কুরবানির পশু। চাঁদপুরের ঘোড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করে বেশকিছু হতদরিদ্র পরিবার। যাদের নিজেদের ঘর-বাড়ি নেই। সরকারের দেয়া ঘরেই থাকেন তারা। কোন রকমে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, অনেকের ঘরই সেই আসমানী কবিতার ভাঙা ঘরের মতোই বাতাস এলে দোল খায়। অনেকটা এমন, ‘একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে/ তারই তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।’ যে টাকা তারা উপার্জন করেন, তা দিয়ে কোনমতে চলে সংসার। আবার অনেকে কোন কাজই করেন না।
মমতাজ বেগম, বয়স পঞ্চাশের কোটা ছুঁই ছুঁই। এখনই যেন চোখেমুখে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে। এক ছেলে এক মেয়ের সংসার। ছেলে সোহাগ গাজী ঢালাইয়ের কাজ করে যা পান; তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। গত বিশ বছর ধরে তিনি এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে আছেন। অনেক সময় তিন বেলা খাবার জোগাতে কষ্ট হয়। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, কোনো ঈদে কি কুরবানি দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল? তিনি জানালেন, ‘বাবারে, তিন বেলা যে খাওন খাই, হেইডা জোগাড় করতেই তো পোলার কষ্ট অয়। কুরবানি দিমু কেমতে? আমার পোলায় শ্রমিক। কোন রহমে দিন কাডে আমাগো। তয় মাইনসে ঈদের দিন যে গোশত দেয়, হেইডা দিয়াই কদ্দূর খাই আর কী।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের কোণে জল জমছিল তার।
সাথী আক্তারও প্রায় বিশ বছর যাবৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছেন। নানির দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই থাকেন তিনি। স্বামী মানিক মোল্লা রিক্শাচালক। রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়েই চলে তাদের টানাটানির সংসার। তার এক ছেলে এক মেয়ে। তিনি জানালেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালায়। কুরবানি দেওনের ক্ষ্যামতা আমগো নাই। তয় আমার জামাই ঈদের দিন মাইনসের বাইত গোশত কাডনের কাম করে। হেয়ানতে যেই গোশত পাই, তা দিয়াই ঈদের দিন খুব আনন্দ কইরা খাই।’
Advertisement
মঞ্জু হাজী পেশায় একজন ভাঙারি মালের শ্রমিক। আগে রিকশা চালাতেন। বসতভিটা হারিয়ে কচুয়া থেকে পাড়ি জমান আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তার নানির দেয়া ঘরেই থাকেন তিনি। কুরবানি দেয়া না হলেও কুরবানির দিন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মাংস কাটার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘নিজের কুরবানি দেওনের মত টেয়া-হইসা নাই। তবে কুরবানির দিন মাইনসের বাইত যাইয়া গোশত কাডি। হেহান তেন যে গোশত দেয়, হেইডা লইয়া আইন্না হোলাহাইন, বউ লইয়া খাই।’
এদের মতো অনেকেই আছেন সেখানে। যারা এবারও কুরবানি দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। প্রতিবছরই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের ইতি ঘটাতে পারেন না তারা। তবে তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, ঠিক একদিন মহান আল্লাহ তাদের কুরবানি দেয়ার তৌফিক দান করবেন।
এসইউ/এমকেএইচ
Advertisement