জাতীয়

কালা মানিকের দাম ২০ লাখ!

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাগরিকা গরুর বাজারে গিয়ে সোজা কয়েকটা ডোগা (গরু বাঁধার স্থান) পার হতেই চোখে পড়ল কিছু একটাকে ঘিরে ভিড় করেছেন উৎসুক জনতা। ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল ‘কালা মানিক’। দূর থেকে দেখে মনে হলো ছোটখাটো হাতি। কিন্তু কাছে যেতেই কেটে গেল ঘোর। এটি একটি গরু; চট্টগ্রামের গরু! এ নিয়ে বাজারের ক্রেতা থেকে ব্যাপারি কারও বিস্ময়ের শেষ নেই।

Advertisement

গরুটি এবার কোরবানির বাজারে তুলেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার খামারি সালাহউদ্দিন।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে টিপটিপ বৃষ্টি উপক্ষা করেই কালা মানিককে দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছিল। সাগরিকা গরু বাজারের ইজারাদারেরা জানালেন, এখন পর্যন্ত এটিই সাগরিকা গরু বাজারের সবচেয়ে বড় গরু।

খামারি সালাহউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, দেশি সংকর জাতের গরুটি গত বছর কোরবানির ঈদের পর পাঁচ লাখ টাকায় কিনেছিলাম। সাড়ে ১১ মাস লালন-পালনের পর গরুটির ওজন এখন ৩২ মণ। পূর্ব অভিজ্ঞতা আর ভালোবাসার পরশ পেয়ে ১১ মাসেই গরুটির দৈহিক গঠনে আমূল পরিবর্তন আসে। হাটে আনার আগে ওজন মেশিনে পরিমাপ করে দেখা গেছে এর ওজন প্রায় ১২০০ কেজি।

Advertisement

তিনি জানান, কালা মানিক নামটি মানুষের দেয়া। যারাই গরুটিকে দেখতে আসত সবাই গায়ের রঙ দেখেই তাকে কালা মানিক নামে ডাকত। বিক্রির উদ্দেশে এই প্রথম কালা মানিককে আনা হয়েছে সাগরিকা গরুর বাজারে।

বোয়ালখালী উপজেলার সাজিদ এ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী সালাহউদ্দিন কালা মানিকের দাম হাঁকিয়েছেন ২০ লাখ। এরই মধ্যে একাধিক ক্রেতা ১০ থেকে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তবে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চাহিদার কাছাকাছি আসলেই কালা মানিককে বিক্রি করবেন এ খামারি।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গরুটির বয়স প্রায় চার বছর। এক বছর ধরে আমি লালন-পালন করছি। এবার বিক্রি না করলে খরচ বেড়ে যাবে। তাই সাধ্যের মধ্যে দর পেলে বিক্রি করে দেব। এবারই প্রথম আমার খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু করেছি। জানি না ভাগ্যে কী আছে।’

পাশেই বাঁধা ছিল আরও একটি মোটাতাজা গরু। খামারি সালাহউদ্দিন জানান, ওই গরুটার নাম সাদা মানিক। প্রায় ২৫ মণ ওজনের গরুটির দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ।

Advertisement

শুধু কালা মানিক বা সাদা মানিক নয়। সাগরিকা বাজারে এসেছে প্রায় সমান সাইজের আরও অনেক গরু। এর অধিকাংশই কুষ্টিয়াসহ চট্টগ্রামের বাইরে থেকে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন খামারি মো. মাছুম বিল্লাহ। এর একটির নাম ‘জমিদার’। তিনি গরুটির দাম হাঁকিয়েছেন সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। সামান্য ছোটটার নাম দিয়েছেন ‘যুবরাজ’। দাম চাইছেন ১৪ লাখ।

এ ছাড়া মিরসরাই থেকে প্রায় ১১০০ কেজি ওজনের ‘নবাব’ নিয়ে এসেছেন খামারি সোহরাব হোসেন।

সোহরাব জাগো নিউজকে জানান, নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে তিনি এখন গরুর খামার করছেন। অল্প দিনের অভিজ্ঞতায় বেশ লাভবানও হচ্ছেন।

বছর পাঁচেক আগেও চট্টগ্রামে কোরবানির অধিকাংশ পশুর চাহিদা মেটাত বাইরের পশু। সারাদেশ থেকে ট্রাকে গরু-ছাগল নিয়ে বেপারিরা নগরের হাটগুলোতে বিক্রি করতেন। তবে এখন সেই অবস্থা নেই। বছরের এ একটি উৎসবের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে গরুর খামার। শুধু কোরবানিতে নয়, নগরীতে সারা বছর বিয়ে, মেজবান ও ওরসের চাহিদাও মেটানো হচ্ছে স্থানীয় খামারের গরু দিয়ে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামবাসীর পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে রেড চিটাগাং ক্যাটল বা লাল গরু।

আবু আজাদ/এনডিএস/জেআইএম