খেলাধুলা

ছয় বছর আগে সাকিবের সেই অমর কীর্তি

মারকাটারি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ৬ রান খরচ করা যেকোনো বোলারের জন্য স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আর সে সঙ্গে যদি যোগ হয় সমানসংখ্যক উইকেট, তখন কেমন হয় ব্যাপারটা? অবিশ্বাস্য! তাই নয়?

Advertisement

ছয় বছর আগে ঠিক আজকের দিনে এ অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে গিয়ে ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ৬ রান খরচায় ৬টি উইকেট শিকার করেছিলেন সাকিব, সঙ্গে ছিলো একটি মেইডেন।

সাকিবের স্পিন ঘুর্ণির বিপক্ষে সেদিন অসহায় ছিলেন ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর ব্যাটসম্যানরা। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হয়তো ঘুণাক্ষরেও এমন পরিণতির কথা ভাবেননি ত্রিনিদাদ অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো।

সেদিনটা যে ছিলো সাকিবের, তার বার্তা যেনো পাওয়া যাচ্ছিলো আগেই। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আনা হয় সাকিবকে। তবে এর আগেই জাস্টিন গুইলেন এবং ডেভি জ্যাকবসের ক্যাচ ধরেন সাকিব। তিনি আক্রমণে আসার আগে সাজঘরে ফিরে যান ড্যারেন ব্রাভোও।

Advertisement

পঞ্চম ওভারে সাকিব যখন বল হাতে নেন, তখন ত্রিনিদাদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২৯ রান। অর্থাৎ বাকি ৭ উইকেটের ৬টিই নিজের ঝুলিতে পুরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। যার শুরুটা তিনি করেন নিজের স্পেলের প্রথম বল থেকেই। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি ধরতে পারেননি রস টেলর, ফলে আউট হন লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে।

সেই ওভারে সাকিব খরচ করেন মাত্র ১ রান। তার পরের ওভার থেকে ৩ রান নেন ডোয়াইন ব্রাভো এবং কেভিন ওব্রায়েন। তবে সাকিবের তৃতীয় এবং ইনিংসের দশম ওভারে আর কিছুই করার ছিলো ব্রাভো-ওব্রায়েনের।

প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেয়ার মিশনে থাকা ত্রিনিদাদ অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভোকে দশম ওভারের প্রথম বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। একই ওভারের তৃতীয় বলে নিকলাস পুরান ক্যাচ দেন শর্ট লেগে দাঁড়ানো কাইরন পোলার্ডের হাতে এবং শেষ বলে সুইপ করতে গিয়ে সোজা বোল্ড হয়ে যান কেভন কুপার।

নিজের ৩ ওভার শেষে সাকিবের বোলিং ফিগার তখন ৩-১-৪-৪! দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিবকে টানা বোলিং করাতে কোনো সমস্যাই ছিলো বার্বাডোজ অধিনায়ক পোলার্ডের। দ্বাদশ ওভারে নিজের স্পেল শেষ করতে আসেন সাকিব। এবারও প্রথম বলেই নেন উইকেট।

Advertisement

ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর বড় শট খেলার চেষ্টা করেন স্যামুয়েল বদ্রি। কিন্তু সাকিবের ঘূর্ণি বল তার ব্যাট গলে সোজা আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। পাঁচ উইকেট পূরণ হয় সাকিবের, ৪৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে ত্রিনিদাদ।

তবে তখনও বাকি ছিলো সাকিব শো। নিজের স্পেলের প্রথম বলের মতো, শেষ বলেও আঘাত হানেন তিনি। এবার আউট করেন কেভিন ওব্রায়েনকে। সাকিবের স্লো টার্ন বুঝতে না পেরে সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো পোলার্ডের হাতে ক্যাচ দেন ওব্রায়েন।

এরই সঙ্গে শেষ হয় সাকিবের স্বপ্নের মতো এক স্পেল। তখন স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছিল সাকিব আল হাসান ৪-১-৬-৬! যা কি-না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। মাত্র ১ রান বেশি খরচ করায় শীর্ষে বসেনি সাকিবের নাম। তবু অবিশ্বাস্য এ কীর্তির ভার কমেনি একটুও।

সাকিবের এ বোলিং জাদুর পর ত্রিনিদাদ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৫২ রান। রান তাড়া করতে নেমে বিপদে পড়ে যায় বার্বাডোজও। ব্যাট হাতে সাকিব আউট হন ৬ বলে ১ রান করে। তবে ৮ ওভারের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তার দল।

এসএএস/এমকেএইচ