আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রিত্ব রাখতে পারবেন বরিস জনসন?

সফল চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ এবং নড়বড়ে কনজারভেটিভ দলের ভীত শক্ত করাই মূল চ্যালেঞ্জ নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সামনে। তিনি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হবেন নাকি থেরেসা মের পরিণতি বরণ করবেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

Advertisement

কনজারভেটিভ দলের যে কজন নেতার ব্যাপক প্রচারণা ও অবস্থানের কারণে ব্রেক্সিটের পক্ষে গিয়েছে গণভোট, তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসন। কথার লড়াইয়ে ব্রিটিশ রাজনীতির ময়দান গরম রাখা আর সমালোচনা কুড়ানোর ক্ষেত্রেও যিনি থাকেন সর্বাগ্রে।

পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সদস্যদের রায় আনতে দুই বছরে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গত ৭ জুন পদত্যাগ করেছেন থেরেসা মে। গণভোটের আগে ব্রেক্সিট-বিরোধিতা করলেও সেই কাজটি করার দায়িত্ব পড়েছিল তার কাধে। কিন্তু ২১ মাস সময় পেয়েও সফল হতে পারেননি তিনি।

নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনের কড়া ইইউ-বিরোধী মনোভাবের শুরুটা হয়েছিল আশির দশকের শেষে, যখন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনে ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তখন থেকেই এই সংস্থায় যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হতে দেখা যায় তাকে।

Advertisement

আরও পড়ুন> যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

সে সময় ইউরোপীয় কমিশনে যুক্তরাজ্যের অবস্থান পোক্ত করার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী-খ্যাত মার্গারেট থাচ্যার। সবার বিরোধী অবস্থানে গিয়ে ইউরোপীয় কমিশনে যুক্তরাজ্যের ফি কমিয়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি।

ব্রেক্সিটের আলোচনা করতে গিয়ে থ্যাচারের সে সময়কার শক্ত অবস্থানের উদাহরণ টেনে থাকেন জনসন। নতুন প্রধানমন্ত্রীর একটি জীবনীতে উঠে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের সঙ্গে তার বেশ সখ্যতাও ছিল।

১৯৭৯ সালে থ্যাচার যখন যুক্তরাজ্যেল প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন, তখনও বর্তমান সময়ের মতো বহুধা বিভক্ত ছিল টরি পার্টি। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশকে টেনে তোলার পাশাপাশি স্নায়ুযুদ্ধকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন থ্যাচার।

Advertisement

আবার কনজারভেটিভ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা থ্যাচার। নিজ দলের জন মেজরের হাতে ক্ষমতা তুলে বিদায় নেন তিনি।

জন মেজর সাড়ে ছয় বছর ক্ষমতায় থাকলেও দলের অবস্থান পোক্ত না করে উল্টো খারাপ করেছিলেন। তারপর টানা ১৩ বছর ক্ষমতা ছিল লেবার পার্টির দখলে।

দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১০ সালে ডেভিড ক্যামেরুনের নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও এক বছরের মাথায় বেক্সিটকে কেন্দ্র করে পদ ছাড়তে হয় তাকে।

থ্যাচারের বিদায়ের ৩০ বছরের মাথায় ব্রেক্সিট নিয়ে সংকটের মুখে যুক্তরাজ্য। ক্যামেরুনের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে এলেন টেরিসা মে, তাঁকেও বিদায় নিতে হয় ব্রেক্সিট সফল না করেই৷

আরও পড়ুন> ইরান-ব্রিটেন উত্তেজনায় বাড়তে পারে তেলের দাম

ব্রেক্সিটের কড়া সমর্থক হওয়ার কারণে মে সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বাঁছাই করা হয়েছিল জনসনকে। কিন্তু ব্রেক্সিটের ধরণ কেমন হবে সেই বিতর্কে পদ ছাড়েন এই টরি নেতা।

এলোমেলো সোনালি চুলের বরিস জনসন লন্ডনের সাবেক মেয়র, ব্রিটিশ রাজনীতির এক জনপ্রিয় এবং বর্ণাঢ্য চরিত্র- যার চটকদার কথা এবং বিচিত্র কর্মকান্ড প্রায় সবসময়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়।

ব্রেক্সিট নিয়ে সফল হতে হলে দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি সংসদে বিরোধ দল লেবার পার্টির সমর্থনও খুব দরকার। কারণ বর্তমান সংসদে বড় কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রক্ষণশীলদের। আবার থেরেসা মের মতো নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনকেও আস্থা ভোটের দিকে নিয়ে যেতে পারে জেরেমি করবিনের দল।

বিচিত্র চরিত্রের জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও শিক্ষামন্ত্রী অ্যানে মিলটনসহ কয়েকজন। আবার ব্রেক্সিট-বিরোধী অনেকে তার বিপক্ষে একাট্টা।

রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকা বরিস জনসন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কতোটা সফল হবেন- তা এখন দেখার বিষয়। বেক্সিটের পাশাপাশি তিনি টরি দলের ভীত শক্ত করতে পারবেন কিনা, পূর্বসূরীর মতো ব্যর্থ হয়ে পদ ছাড়বেন কিনা সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এসএ/এমএস