জাতীয়

বিমানের ‘গলার কাঁটা’ সরাতে খরচ ৪.১ মিলিয়ন ডলার

মিসর থেকে ক্রুটিপূর্ণ দুটি ইজিপ্ট এয়ারক্রাফটের মধ্যে একটি ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ বিমানের পাওনা পরিশোধসহ ৪.১ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। বিমানের ‘গলার কাঁটা’ নামে পরিচিত এ দুটি এয়ারক্রাফট নেওয়ার সময় অসম চুক্তি করায় ফেরত দিতে এ বিশাল অংকের টাকা গুণতে হয়েছে। অন্য বিমানটিও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে।

Advertisement

রোববার (২১ জুলাই) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পঞ্চম বৈঠকে বিমান এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ওই ত্রুটিপূর্ণ বিমান ফেরত পাঠাতে পারায় প্রতি মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সাশ্রয় হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের। তবে সংসদীয় কমিটি তাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। মিসর থেকে ত্রুটিপূর্ণ বিমান ভাড়া করার ক্ষেত্রে যে অসম চুক্তি করা হয়েছিল সেটি খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয় কমিটি। এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশও করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিমানের কোনো বড় ধরনের চুক্তি বা কেনা-সংক্রাংন্ত বিষয়ে কমিটিকে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ওই বছরের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। ১১ মাস পার করে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

Advertisement

ধারণা করা হয়, সুবিধাভোগীদের স্বার্থ হাসিল করতে চড়া দামে ইঞ্জিন ভাড়া করা হয়। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাউন্ডেড থাকে উড়োজাহাজ দুটি। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এদিকে ভাড়ার ১১ কোটি টাকা করে প্রতি মাসে গুণতে হয়েছে বিমানকে। এর মধ্যে একটি ১৬ জুলাই ফেরত পাঠাতে পেরেছে বিমান।

বৈঠকে বিমান জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের ১৭ তারিখ অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১৭ জনকে ১৭ শতাংশ মূল্য ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়া বিগত ১০ বছরে বিমানের কি কি যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি।

পর্যটন শিল্পকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য একটি বিস্তর কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। অন্যদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন করতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মো. আসলামুল হক, তানভীর ইমাম, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।

Advertisement

এইচএস/আরএস/পিআর