দেশজুড়ে

শ্রমিক লীগের নামে টোকেন দিয়ে চাঁদাবাজি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় চলছে যানবাহন থেকে রশিদ দিয়ে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়। টোকেন দিয়ে এ চাঁদা আদায় করছে স্থানীয় একটি চক্র। প্রতিটি সিএনজি থেকে ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের যানবাহন থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে চক্রটি।

Advertisement

সম্প্রতি মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ দুই চাঁদাবাজকে র্যাব-১১ গ্রেফতার করলেও তাদের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। এতে করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিএনজি, অটোরিকশা ও বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা। শনিবার সরেজমিনে টোকেন দিয়ে চাঁদা আদায় করতে দেখা যায়।

যানবাহনের চালকরা জানান, চাঁদার রশিদ ধরিয়ে দেয়া হয় গাড়ি থামিয়ে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধর করে গাড়ি আটকে রাখাসহ নানা হয়রানি করা হয়। অনেক সময় গাড়ি ভাঙচুর ও চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজিচালক বলেন, রশিদের মাধ্যমে প্রতিদিন দুবার করে আমাদের কাছ থেকে একটি সংগঠনের নাম ব্যবহার চাঁদা আদায় করা হয়। আমাদের কল্যাণে এ টাকা ব্যয় করার কথা থাকলেও কোথায় যায় এ টাকা আমরা জানি না। যারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করে তারা পুলিশকে টাকা দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, সোনারগাঁয়ে তিন থেকে চারটি লাইন রয়েছে। সেখানে প্রায় সহশ্রাধিক সিএনজি চলাচল করে। এ লাইনগুলো থেকে ১০-১২ জন লোক টাকা উত্তোলন করে। ২০ টাকা করে হলেও প্রতি মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি করা হয় মোগরাপাড়া চৌরাস্তায়।

চাঁদা উত্তোলনের একটি রশিদে দেখা যায়, বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগ (অটোরিকশা ও অটো টেম্পু চালকদের সমন্বয়ে গঠিত)। এই নাম ব্যবহার করে চাঁদা তোলা হয়। এখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও আদায়কারীর স্বাক্ষরের স্থান থাকলেও কারও স্বাক্ষর নেই। নেই কারও নাম-ঠিকানা।

তবে চাঁদা আদায়ের বিবরণে লেখা রয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল দুই টাকা, আঞ্চলিক কমিটি পরিচালনা খরচ তিন টাকা, আদায়কারী তিন টাকা, যানজট নিরসনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের বেতন দুই টাকা ইত্যাদি। মোট ১০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তবে পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করেছেন ১০ টাকার বদলে ২০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।

চাঁদার রশিদে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাংলাদেশ অটোরিকশা শ্রমিক লীগের শাখা অফিসের কথা উল্লেখ থাকলেও চৌরাস্তায় খোঁজ নিয়ে এমন অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Advertisement

জানতে চাইলে চাঁদা তোলা লাইনম্যান আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, রশিদ দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়। উত্তোলিত টাকার একটি অংশ যানজট নিরসনে ব্যয় হয়। এই টাকা সিএসজি অটোরিকশা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

এ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাদের চেনেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, চাঁদা তোলা সংগঠনটি ভুঁইফোড়। চাঁদাবাজি সোনারগাঁ শ্রমিক লীগ সমর্থন করে না। তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস