দেশজুড়ে

লালমনিরহাটে চরম খাদ্য সংকটে বন্যাকবলিতরা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে গেলেও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। বন্যাকবলিত পরিবারগুলো স্থানীয় গাইডবানের আশ্রায় নিয়েছে। এদিকে পানিবন্দি হয়ে পড়ায় এসব এলাকায় দেখা দিয়েছি চরম খাদ্য সংকট।

Advertisement

এছাড়া পানি ঢুকে পড়ার কারণে জেলার ৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডালিয়া পানি উন্নয়র বোর্ড। তবে ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তার পানির তোড়ে জেলার আদিতমারি উপজেলার নদী রক্ষা কুটিরপাড় বাঁধের ২০০ মিটার ধসে গিয়ে হাজারো ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

Advertisement

এদিকে গত সাত দিন থেকে চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি থাকলেও অধিকাংশ এলাকাতেই পৌঁছায়নি ত্রাণ বা কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা। ফলে দুভোর্গে পড়েছে বানভাসী মানুষ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হলেও ৬৩টি চরের অধিকাংশ দুর্গত মানুষই পাননি সরকারি সাহায্য- এমনটাই দাবি ভুক্তভোগীদের।

গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, ফকিরপাড়া, সির্ন্দুরনা, ডাউয়াবাড়ি, গড্ডীমারী, পাটিকাপাড়া, চর গড্ডীমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোবর্ধন, কুটির পার এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মোগলহাট, কুলাঘাটসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও স্কুল-কলেজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত তাদের গোজলডোবা ব্যারেজের ১০টি জলকপাট বন্ধ করে দেয়ায় তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা কমেছে। তবে ধরলা নদীর পানি সকালে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবের কুটি গ্রামে। হুমকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল।

Advertisement

পানিবন্দি পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনও অধিকাংশ পরিবারই কোনো ত্রাণ বা সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। তাদের সঙ্গে থাকা খ্যাদ্য সামগ্রী ফুরিয়ে যাওয়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানিবন্দি থাকায় পশু খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

চর খুনিয়াগাছ ও চর রাজপুরের বাসিন্দা আমজাদ হোসনে, আবদুল গফুর ও মেহের আলী জানান, গত সাত দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও তারা কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।

হাতীবান্ধা উপজেলার কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে না থাকা পরিবারগুলো স্থানীয় গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, পাঁচ দিন ধরে ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। সরকারিভাবে মাত্র ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যেটা পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

তবে লালমনিরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আহসান হাবিব পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে দাবি করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।

রবিউল হাসান/এমবিআর/জেআইএম