দেশজুড়ে

বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে দুই উপজেলাবাসী

উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ দুই উপজেলার প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নান্দাইবাড়ি বেড়িবাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে প্লাবিত হতে পারে দুই উপজেলার ২৫-৩০টি গ্রাম এবং শত শত বিঘা ফসলি জমি।

Advertisement

বিগত ২০১৭ সালে বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল এ দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। তবে এ বাঁধটি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ঠেলাঠেলি শুরু করেছে। কেউই বলছে না বাঁধটি রক্ষার দায়িত্ব কার।

বাঁধের এমন অবস্থার কথা শুনে রোববার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ছোট যমুনা নদী তীরের এ বাঁধটি জেলার রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ী, কৃষ্ণপুর এবং আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। আশির দশকে স্থানীয় সরকারের সহায়তায় স্থানীয়রা এ বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করেন। এরপর থেকে সরকারের কোনো দফতর এই বাঁধের কোনো সংস্কার করেনি। কয়েক বছর যাবত স্থানীয়রা বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে কোনো মতে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে বাঁধটি।

Advertisement

এদিকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কোথায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাবে- এমন আশঙ্কায় নদীর দুই তীরের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। বর্তমানে ছোট যমুনায় উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে কোনো সংস্কার না হওয়ায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বেড়িবাঁধটি চরম এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এ দুই উপজেলার লোকজন।

নান্দাইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন, আতোয়ার হোসেন, গফুর মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, প্রায় তিন যুগের বেশি আগে বাঁধটি তৈরি করা হয়েছে। এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। বাঁধের নিচ দিয়ে ইদুর গর্ত করেছে। এতে করে বাঁধটি বসে নিচু হয়েছে এবং ধীর ধীরে পানি বের হয়। বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুক। বর্ষার সময় আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে এই বেড়িবাঁধটির জন্য। এ বছর বাঁধটি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। এমনটি হলে প্লাবিত হবে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বাঁধটি সংস্কারে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

রানীনগর উপজেলার গোনা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান বলেন, বাঁধটি সংস্কারে জন্য কোন দফতরে আবেদন করতে হবে তা এখনও জানতে পারিনি। শুধুমাত্র যখন ভেঙে যায়, তখন বড় বড় সরকারি কর্মকর্তারা এসে আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো বাস্তবায়ন হয় না। দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় বাঁধটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, বাঁধটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এটি কোন দফতরের তা কেউই স্বীকার করছেন না। বাঁধটি সংস্কারে অনেক টাকার প্রয়োজন, যা উপজেলা পরিষদের একার পক্ষে অসম্ভব। সব দফতর মিলে পদক্ষেপ নিলে এই কাজটি করা সম্ভব হবে।

Advertisement

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা বাঁধটি পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করব এই সময়ে বাঁধের কোনো সংস্কার করা যায় কি না।

রানীনগর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। এরকম বাঁধ সাধারণত আমরা করি না। পাউবো বিষয়টি জানতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

নওগাঁ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার বলেন, অফিস থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধটি আমরা নির্মাণ করিনি। এছাড়া বাঁধটি আমাদের প্রজেক্ট এলাকার মধ্যেও পড়ে না। আমাদের চিফ স্যার (প্রধান প্রকৌশলী) অনুমতি দিলে কাজটি আমরা করতে পারব।

আব্বাস আলী/এমএমজেড/পিআর