বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে তিস্তার পানি বেড়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাট বাইপাস ছুঁই ছুঁই পানি ব্যারেজ রক্ষার্থে যেকোনো মুহূর্তে ফ্লাট বাইপাস কেটে দেয়া হতে পারে। এদিকে পানি ঢুকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, গড্ডিমারী, বড়খাতা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানিও। এ অবস্থায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কাজেই বন্যা মোকাবেলায় নিতে হবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।
Advertisement
আজ শনিবার সকালে তিস্তার পানি প্রবাহ দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি ৫৩.১১ সেন্টিমিটার। তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গড্ডিমারী ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। পানির তোড়ে গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাটখোলা সড়কের পাশে পানি আসা শুরু করেছে। এছাড়াও হাতীবান্ধা থেকে বড়খাতার বাইপাস সড়কের তালেব মোড় এলাকার সড়কটির বিরাট অংশ ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজনের বাইপাস সড়কের সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ ভাঙনের ফলে এরই মধ্যে ওই এলাকার ৩০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নটির চারপাশের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় এলাকার লোকজনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলের বসবাসরতদের বাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জামালপুর জেলায়ও বন্যার পানি ঢুকেছে।
Advertisement
বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষজ্ঞের মতে, আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি এবং ভৌত অনেক কারণ বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বন উজাড়করণ এই প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষকরা প্রায় নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। ভৌত কারণগুলোর মধ্যে সম্প্রতি হিমালয়ে অস্বাভাবিকভাবে বরফের আস্তরণ (গ্লেসিয়ার) গলে যাওয়া, নদী, উপনদী ও খালগুলোর পানি নির্গমন ক্ষমতা বিভিন্ন কারণে হ্রাস পাওয়া, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ এবং নির্বিচার বন উজাড় হওয়া অন্যতম।
এছাড়া গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার একটি বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বন্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কখনও কখনও এই বন্যা সহনশীল মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ভয়াল আকার ধারণ করছে। প্রায় ২৩০ টি নদী একটি জটিল জালের মতো বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে ৫৭ টি নদী আন্তঃদেশীয়, যেগুলো চীন, ভুটান, নেপাল ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলোর প্রবাহের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি উল্লিখিত উজানের দেশগুলোতেই রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ এই নদীগুলোর পানি-বহির্গমন পথের শেষপ্রান্তে অবস্থিত হয়ে নদী-বাস্তুসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এর ফলে নদী, উপনদী, খাল ও অন্যান্য চ্যানেলগুলোর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টিতে সহজেই পানি উপচিয়ে বন্যার আকার ধারণ করছে। নির্বিচার বনধ্বংস হওয়ার ফলে বনভূমি থেকে প্রচুর মাটিক্ষয় হয়ে বৃষ্টির ঢলের সঙ্গে তা প্রবাহিত হয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য ইতোমধ্যেই কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।
এ অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে তেমনি বন্যার তাৎক্ষণিক আঘাত থেকে বাঁচার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। দুর্গত মানুষ-পশুপাখি যেন আশ্রয় পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের জোর দৃষ্টি প্রয়োজন।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম