আন্তর্জাতিক

অমর্ত্য সেনের অবদান নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিজেপি

উগ্র হিন্দুত্ববাদ নিয়ে মন্তব্য করে বিজেপির কটাক্ষের মুখে পড়েছেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। মানুষকে প্রহার করার জন্য জয় শ্রীরাম স্লোগান ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Advertisement

দেশের প্রতি তার (অমর্ত্য সেন) কী অবদান আছে? লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাফল্যের পর জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে বিতর্ক থামছে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই স্লোগানের সামনে পড়তে হয়েছে। কোথাও এই স্লোগান তুলে আক্রমণ করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের। কোথাও স্লোগান দেয়ার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের।

এই বিতর্কের বিষয়ে বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনেও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি নাম না করে দেশের ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘কাউকে একটা বুলি বলতে বলা হচ্ছে। সেটা তিনি না বললে তার মাথায় লাঠি মারা হচ্ছে। আমরা যদি এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছে থাকি, সেটা চিন্তার। জয় শ্রীরাম স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষকে প্রহার করার জন্য। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই, এটা মনে করা যাবে না।’

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যোগ করেন ‘কলকাতায় এখন বড় করে রামনবমী পালন করা হচ্ছে শুনছি। আগে এমন হতে শুনিনি বাংলায় ইদানীং এসব আমদানি হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে এর যোগ ছিল না।’

Advertisement

অমর্ত্য সেনের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে যায়। তিনি বরাবরই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামো রক্ষা করার ব্যাপারে বলেছেন। তাই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তার সম্পর্ক কোনো কালেই ভালো ছিল না। জয় শ্রীরাম বিতর্কে সেই তিক্ততা ফের প্রকাশ্যে এসেছে। সারা বিশ্বের বাঙালির গর্ব এই প্রবীণ মানুষটিকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হয়ছে।

সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি, সাংসদ দিলীপ ঘোষ। বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করতে গিয়ে অমর্ত্য সেনের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত। কিন্তু, তিনি দেশকে কী দিয়েছেন, সেটা কেউ বোঝেন না। তিনি নিজে বোঝেন কিনা সেটাও সন্দেহ।’

‘এই ধরনের লোকেরা আজ বাঙালির গর্ব। তাদের কোনো চরিত্র নেই, মেরুদণ্ড নেই।’ স্লোগানের পক্ষে জোরালো আওয়াজ দিয়ে বলেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগান নিষিদ্ধ নয়। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে এই স্লোগান দিলে কেন গ্রেফতার হতে হচ্ছে? এটা অসহিষ্ণুতা নয়? মারধর করে স্লোগান বন্ধ করা যাবে না।’

প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও বর্তমান মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ফেসবুক পোস্টে প্রবীণ অর্থনীতিবিদকে আক্রমণ করে লিখেছেন, ‘শ্রীরামপুরের নাম কখনো শোনেননি অমর্ত্যবাবু? কিংবা রামরাজাতলা? অবশ্য বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকলে আর কোথা থেকে শুনবেন।’

Advertisement

তরুণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় কয়েক বছর রাজনীতিতে এসেছেন। তিনিও অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘তার বয়স কথা বলছে, মস্তিষ্ক বা অন্য কিছু নয়। সেই কারণেই জয় শ্রীরামের মানে বুঝতে পারেননি উনি।’

‘বাংলায় জয় শ্রীরাম প্রতীকী প্রতিবাদের ধ্বনি, এর সঙ্গে ধর্মের যোগ নেই। জয় শ্রীরাম ধ্বনি অবশ্যই মানুষকে প্রহারের জন্য ব্যবহার অনুচিত। এই ধ্বনি ব্যবহার হচ্ছে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই হিসেবে।’

এমআরএম/এমকেএইচ