দেশজুড়ে

ঘুমন্ত জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা, ৪ জন রিমান্ডে

মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় নরসিংদীর হাজিপুরে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

বুধবার দুপুরে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তারের আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে নিহত জান্নাতির স্বামী সাব্বির আহমেদ শিপলু মিয়ার চারদিন ও অন্য তিনজনের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

রিমান্ডে নেয়া অন্যরা হলেন- জান্নাতির শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০), শাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী ও ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০)। তারা সবাই চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নাটোরের পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন > জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা, শাশুড়িসহ গ্রেফতার ৪

Advertisement

বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ।

মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ওরফে জান্নাতি আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় ১৫ জুন নিহতের বাবা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে নাটোর থেকে নিহত জান্নাতির স্বামী শিপলু মিয়া, শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া, শাশুড়ি শান্তি বেগম ও ননদ ফাল্গুনী বেগমকে গ্রেফতার করে। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন, সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি সৈয়দুজ্জামান, ডিবি পুলিশের ওসি গোলাম মোস্তফা ও গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া এসআই নাইমুল ইসলাম মোস্তাক।

জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর জান্নাতি বুঝতে পারে পরিবারটির সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু এতে রাজি হননি জান্নাতি।

Advertisement

আরও পড়ুন > তোমার কাছে জীবনে কিছুই চাই না, একটা ইনজেকশন দাও বাবা

পরে তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শান্তি বেগম, ফাল্গুনী বেগম ও শিপলু মিলে জান্নাতির শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি তারা। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে জান্নাতিকে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল জান্নাতির দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান আদালতে মামলা করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে গত ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতির মৃত্যু হয়।

গত ১৫ জুন মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শান্তি বেগম, শিপলু, ফাল্গুনী বেগম ও হুমায়ুন মিয়াকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম। এরপরই আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ।

পাশাপাশি দীর্ঘ ৫১ দিন তদন্ত শেষে জান্নাতি হত্যায় জড়িত স্বামী শিপলু, শাশুড়ি শান্তি বেগম, শ্বশুর হুমায়ুন ও ননদ ফাল্গুনী উল্লেখ করে রোববার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।

সঞ্জিত সাহা/এএম/জেআইএম