দেশজুড়ে

ছেলের বাড়ি ছেড়ে মন্দিরে আশ্রয় নিলেন বৃদ্ধা মা

নড়াইলের লোহাগড়ায় ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনে ঘর ছেড়ে শেফালী রানী রায় (৮১) নামে এক বৃদ্ধা মা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পোদ্দারপাড়া সর্বজনীন পূজা মণ্ডপে ওই বৃদ্ধা মা তার ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন।

Advertisement

বৃদ্ধা শেফালী রানী রায় জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার বড় ছেলে শংকর কুমার রায় ও তার স্ত্রী কণা রানী রায়ের নির্যাতনের কারণে নিজ বসতঘরে থাকতে পারছিলেন না তিনি। কারণে অকারণে ছেলে শংকর ও তার স্ত্রী কণা রায় তাকে মারপিট করে। বাধ্য হয়ে তিনি মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বাড়ির পাশে পোদ্দারপাড়া সর্বজনীন পূজা মণ্ডপে আশ্রয় নিয়েছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছেলে ও তার স্ত্রীর নির্যাতনে বাড়ি থেকে এসে মায়ের ঘরে (মন্দির) আশ্রয় নিয়েছি।

বৃদ্ধা শেফালী রানী রায় পৌর এলাকার পোদ্দারপাড়া গ্রামের মৃত চিত্তরঞ্জন রায়ের স্ত্রী। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শংকর রায় কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন। অপর ছেলে বিশ্বনাথ রায় যশোরের ঢাকা রোডে মোটর পার্টস ব্যবসায়ী। তিনি স্ত্রীকৃষ্ণা রায় ও সন্তানদের নিয়ে যশোরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। মায়ের তেমন একটা দেখভাল তিনি করেন না।

Advertisement

বড় ছেলে শংকর রায় বাবার রেখে যাওয়া অর্ধকোটি টাকার ভিটে জমির ওপর দ্বিতল ভবনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। মেয়ে মিনতী সাহা, কনিকা সাহা, মনিকা সাহা ও ছবি রানী সাহা, সকলকেই ভালো পাত্রস্থ করেছেন চিত্ত রঞ্জন ও বৃদ্ধা শেফালী। মিনতী সাহার বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। অন্য মেয়ের সন্তানরাও বেশ বিত্তশালী।

লোহাগড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনিসুর রহমান জানান, পৌর এলাকার পোদ্দারপাড়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন রায়ের বিধবা স্ত্রী শেফালী রায়কে নির্যাতনের খবর তিনি শুনেছেন। শেফালী এখন পোদ্দারপাড়া সর্বজনীন মন্দিরে আছেন।

বৃদ্ধা শেফালী রানী রায় বলেন, বড় ছেলে শংকর ও তার স্ত্রী আমাকে প্রায়ই নির্যাতন করে। ঠিকমতো খেতেও দেয় না। তারা আমাকে সোমবার রাতে জানিয়ে দিয়েছে, ভোরের আগেই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। না হলে মেরে ফেলবে। তাই মঙ্গলবার প্রাণ ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে এই মন্দিরে আশ্রয় নিই। তারা কেউ আমাকে দেখতে আসেনি। আমি আমার স্বামীর ভিটায় ফিরে যেতে চাই। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শেফালী।

তবে বড় ছেলে শংকর রায় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মা রাগ করে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে এসে মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। আমি মাকে বাড়ি নেয়ার জন্য এসেছি।

Advertisement

লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাররম হোসেন বলেন, এমন কোনো ঘটনার খবর আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাফিজুল নিলু/আরএআর/এমএস