কৃষি ও প্রকৃতি

আমের মুকুল ঝরা রোধে যা করবেন

সারাদেশেই আম গাছে মুকুল এসেছে। তবে বিভিন্ন কারণে সেসব মুকুল ঝরেও যায়। এতে ক্ষতি হয় আম চাষিদের। কারণ আমের মৌসুমে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আম বাগান। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকা-মাকড় দমনে ব্যর্থ হলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। তাই আমের মুকুল ঝরা রোধে কিছু করণীয় রয়েছে। আসুন জেনে নেই উপায়গুলো-

Advertisement

আমের মুকুল আসার পর করনীয়

ফুল আসার আগে: আম গাছে ফুল আসার ১৫ দিন আগে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার ২০০-২৫০ গ্রাম করে দিতে হবে দুই-তিন বছর বয়সের গাছে। চার-পাঁচ বছর বয়সের গাছে ৩০০-৩৫০ গ্রাম। ছয়-সাত বছর বয়সের গাছে ৪০০-৫০০ গ্রাম। আট-নয় বছর বয়সের গাছে ৫০০-৮০০ গ্রাম। ১০ বছরের ঊর্ধ্বে ৮৫০ থেকে ১২০০ গ্রাম প্রতি গাছে।

আরও পড়ুন- ফরমালিন প্রতিরোধে লিটনের শখের বাগান

ফুল ফোটার সময়: মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্পমঞ্জরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমণ হতে পারে। এতে গাছের পাতা, কচি ডগা, মুকুল ও কচি আমে কালো দাগ পড়ে। প্রতিকার হচ্ছে- মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১ মিলিলিটার রিপকর্ড বা সিমবুস ১০ ইসি এবং ০.৫ মিলিলিটার টিল্ট ২৫০ ইসি একসাথে মিশিয়ে আমের মুকুল, পাতা, কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরাগায়ণ: এর জন্য আম বাগানে মৌমাছি পালন, চারদিকে ফুলের গাছ রোপণ এবং বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগানো প্রয়োজন। আম গাছে মুকুল আসার সময় হপার পোকা কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এছাড়া রস চোষার সময় পোকা আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে। এতে ফুলে পরাগরেণু আটকে পরাগায়ণে বিঘ্ন ঘটে। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড বা সিমবুস ও টিল্ট আগের নিয়মে স্প্রে করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন- পিরোজপুরের খালে পেয়ারা ও নৌকার হাট

পূর্ণাঙ্গ ফুল পেতে: ত্রুটিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ ফুল এবং বর্ধিষ্ণু ভ্রুণের পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য মুকুল ধরার ১৫ দিন আগে উপর্যুক্ত নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। একই ডালে অনেক ফল ধরলে পুষ্টির জন্য ফলগুলো প্রতিযোগিতা করে বলে ফল ঝরে যায়। অতিরিক্ত ফল পাতলা করে দিতে হবে। হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করলেও আমের মুকুল ও কচি আম ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যায়।

গাছে সার প্রয়োগঃ চারা রোপণের পর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছ প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো-

সারের নাম গাছের বয়স ( বছর ) ১-৪ ৫-৭ ৮-১০ ১১-১৫ ১৬-২০ ২০ এর ঊর্দ্ধে গোবর (কেজি) ২৬.২৫ ৩৫ ৪৩.৭৫ ৫২.৫০  ৭০ ৮৫.৫০ ইউরিয়া (গ্রাম) ৪৩৭.৫০ ৮৭৫ ১৩১২.৫০ ১৭৫০ ২৬২৫ ৩৫০০ টিএসপি (গ্রাম) ৪৩৭.৫০ ৪৩৭.৫০ ৮৭৫ ৮৭৫ ১২১২.৫০ ১৭৫০ এমওপি(গ্রাম) ১৭৫ ৩৫০ ৪৩৭.৫০ ৭০০ ৮৭৫ ১৪০০ জিপসাম(গ্রাম) ১৭৫ ৩৫০ ৪৩৭.৫০ ৬১২.৫০ ৭০০ ৮৭৫ জিংক সালফেট(গ্রাম) ১৭.৫০ ১৭.৫০ ২৬.২৫ ২৬.২৫ ৩৫ ৪৩.৭৫ বরিক এসিড(গ্রাম) ৩৫ ৩৫ ৫২.৫০ ৫২.৫০ ৭০ ৮৭.৫০ আমের মুকুলের ঔষধ স্প্রে করার নিয়ম

গুটি বাঁধার পর: আমের মুকুল গুটি বাঁধার দুই সপ্তাহ পর ২০ পিপিএম মাত্রায় ২৪-ডি স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমের গুটি মসুর দানার মত বড় হলে ১০ লিটার পানিতে দুই-তিন মিলিলিটার প্লানোফিক্স স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হয়।

আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয়

মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চারপাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্র্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়। 

Advertisement

এসইউ/এমএস