ফিচার

বসন্তের রঙে ভালোবাসা

আজ বসন্তের প্রথম দিন, কাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের রঙে ভালোবাসা যেন রঙিন হয়ে ওঠে। বাসন্তি রঙে সাজে মানব হৃদয়। ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে জনে জনে। পারস্পারিক ভালোবাসায় অপরূপ হয়ে ওঠে বসন্তকাল। বসন্তের এমন দিনে ভালোবাসা জানাচ্ছেন মরিয়ম আক্তার—

Advertisement

বাংলা পঞ্জিকার পাতায় বসন্ত আসার নির্দেশ ও তার আগে প্রকৃতি যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে নবরূপে সাজাতে। ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজিয়ে আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। শুধু বসন্ত নয় পহেলা ফাল্গুনের পরদিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুটি যেন মানুষকে পুলকিত করে আত্মহারা আনন্দে। এ যেন এক সুবর্ণ সুযোগ একজন আরেকজনকে মনের কথা বলার।

কতদিন ধরেই না অপেক্ষা করেছিল প্রিয় মানুষকে মনের কথা বলবে বলে। এ সুযোগে হাতে ফুল নিয়ে এক অনুভূতির আনন্দে ছুটে যায় প্রিয়জনকে মনের কথা বলার উচ্ছ্বাসে। রাস্তাঘাটে তরুণ-তরুণীদের হাতে হাতে লাল টকটকে গোলাপ এক অপরূপ দৃশ্য। এ দিনে যেন ফুলের দামে আগুন লেগে যায়। তবুও আবেগি প্রেমিকরা ভুল করে না তাদের প্রিয় মানুষ অর্থাৎ ভালোবাসার মানুষকে ফুল দিয়ে ভালোবাসা নিবেদন করতে। বসন্ত আর ভালোবাসা যেন মিলেমিশে একাকার।

> আরও পড়ুন- মাকে ভালোবাসুন সব সময় 

Advertisement

বাউল আব্দুল করিম গেয়েছেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে/ সই গো, বসন্ত বাতাসে।’ অর্থাৎ বাংলার পল্লিতে শিমুল কৃষ্ণচূড়া পলাশের সুমধুর গন্ধ যেন ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায় পাড়ায়। বসন্তকে বলা যায় পাতা ঝরা বসন্ত। সব উদ্ভিদ নিজেদের পাতা ঝরিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গাছের ডালে ডালে নতুন সোনালি লাল রঙের কচি পাতার সমাগম ঘটে।

এসময় কোকিল তার সুমধুর কণ্ঠে মুগ্ধ করে তোলে। মুখরিত করে তোলে পল্লির মাঠ-ঘাট। দখিনা হাওয়া জুড়িয়ে দেয় মানুষের মন। শীতের সমাপ্তি ঘটলেও বসন্তের সকালে দুর্বা ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু মুক্তার টুকরার মত সূর্যের আলো ঝলমল করতে থাকে। সে এক অপরূপ বৈচিত্র। পাতাঝরা গাছে যখন নতুন কুঁড়ি গজায়, মনে হয় প্রকৃতি যেন সেজেছে এক নববধূর রূপে। প্রকৃতি যেন লজ্জাবতী এক তরুণী, সুন্দরী। বসন্ত আমাদের অকৃপণ হাতে দান করে আত্মহারা আনন্দ।

বসন্ত এলে পাঠক, কবি, লেখকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারাও প্রকৃতির সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বসন্ত নিয়ে কী লেখা যায়, এসব ভাবনায়। বসন্ত নিয়ে অনেকেই লিখেছেন কবিতা, গল্প। তবুও যে ফুরিয়ে যায় না বসন্তের মুগ্ধ করা অপরূপ রূপ। এসব কারণে প্রতিবছর পালিত হয় বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান। বিচিত্র আয়োজনের মধ্যে সম্পন্ন হয় এ অনুষ্ঠান। তরুণ-তরুণীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে খুব আনন্দের মাঝেই বরণ করে নেয় অপরূপ বসন্তকে।

> আরও পড়ুন- কেন এই পহেলা বৈশাখ? 

Advertisement

এদিন সবার মুখে থাকে হাসি। তাই যেন প্রকৃতিও সবার সাথে হাসে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘বসন্তের নীরব হৃদয়/ নূতন উঠেছে আঁখি মেলে/ যা দেখে তাই দেখে হাসে/ যাহা পায় তাই নিয়ে খেলে।’ ছয়টি ঋতুর বাংলাদেশ সাজে বিচিত্র সাজে। কিন্তু পারে না বসন্তের মতো সাজিয়ে তুলতে। তাই তো কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘হয়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে/ বনের কুসুমগুলি ঘিরে, আকাশ মেলিয়া আঁখি, তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/ তার তলে ভালবেসে বসে আছে দুরন্ত পথিক।’

বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুনের পরই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বেঁচে থাকুক সত্য ভালোবাসা, পালিত হোক প্রতিবছর ভালোবাসা দিবস। বসন্তের রঙে মিশে যাক ভালোবাসা।

লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

এসইউ/এমকেএইচ