ফিচার

পাঠাগারে সুফল পাচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থী

জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা বই পড়ি। মনের খোরাক মেটানোর জন্য বই পড়ি। এর জন্য চাই হরেকরকম বইয়ের সমাহার। সেইসঙ্গে চাই নিরিবিলি পরিবেশ। এ কারণেই গড়ে ওঠে পাঠাগার। কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমাদের দেশে এখনো সেভাবে পাঠাগার গড়ে ওঠেনি। প্রয়োজনের তুলনায় মানসম্মত পাঠাগারের সংখ্যা বাড়েনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পাঠাগার নেই বললেই চলে।

Advertisement

পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়া থেকে গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা একপ্রকার বঞ্চিতই বটে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিশু-কিশোরদের হাতে বই তুলে দিতে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল খালিশা বেলপুকুর গ্রামে গড়ে উঠেছে সেতুবন্ধন পাঠাগার।

পাখি ও প্রকৃতি সুরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এ পাঠাগার। নবনির্মিত এ পাঠাগারকে ঘিরে এখন বই পড়ার আনন্দে মেতেছে খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। তিন শতক জমির ওপর টিনের ছাউনির এ পাঠাগারে শোভা পেয়েছে ছয় শতাধিক বই। ধর্মীয়, সাহিত্য ও বিজ্ঞানসম্মত এসব বই দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করে আসছে সেতুবন্ধন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এসব বই সংগ্রহের পেছনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে লেখক, কবি ও সাহিত্যানুরাগীরা।

> আরও পড়ুন- মনের অন্ধকার দূর করে বই

Advertisement

সেতুবন্ধন পাঠাগারে একটিমাত্র বইয়ের সেলফ। সেখানেই গাদাগাদি করে সব বই সাজানো। তাই পছন্দের বই খুঁজে পেতে অবশ্য একটু বেগ পেতে হয়। পাশাপাশি তিনটি টেবিল একসাথে লাগানো। চারপাশে প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা হয়েছে। সেখানে বসেই পছন্দের বই পড়ায় মগ্ন থাকে খুদে পাঠকরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য পাঠাগার খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যবিরতির সময়। শিক্ষার্থীরা এ সময় পাঠাগারে এসে বই পড়ে। বাড়িতেও পড়ার জন্য নিয়ে যায়। সবমিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ পাঠাগার বইয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের বন্ধন আরো দৃঢ় করেছে। সেইসঙ্গে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের নতুন করে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে।

সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত পত্রিকা পড়ারও ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন জাতীয়-স্থানীয় একাধিক পত্রিকা রাখা হয় ডেস্কে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও পাঠকরা খুব সহজেই দেশ-বিদেশের খবরাখবর পেতে পারে। এছাড়াও সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত কবিতা চর্চা, সাহিত্য সভা ও মাসিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে মহামূল্যবান পুরস্কার বই তুলে দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের সদস্যদের প্রচেষ্টায় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন মহলের সহযোগিতায় দিনে দিনে সেতুবন্ধন পাঠাগার আলোর মুখ দেখছে। পাঠক সমাজে সেতুবন্ধন পাঠাগারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ফলে সেতুবন্ধন পাঠাগার সরকারিভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে পাঠাগারটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে। সেইসঙ্গে আরও বই সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

> আরও পড়ুন- প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সফল ভিডিও সম্পাদক রশিদ

সেতুবন্ধন পাঠাগারে নিয়মিত বই পড়তে আসা স্কুলছাত্রী জুই বলে, ‘এখানে আমরা ছড়া ও গল্পের বই পড়ি। পাশাপাশি পত্রিকার মাধ্যমে বিভিন্ন খবরাখবরও জানতে পারি। আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি।’

Advertisement

সেতুবন্ধন পাঠাগারের আরেক নিয়মিত পাঠক সুজন বলে, ‘আমরা এখন অবসর সময়টা পাঠাগারে বিভিন্ন শিশুতোষ ছড়া ও গল্পের বই পড়ে কাটাই।’

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা পাঠাগারের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গ্রামাঞ্চলের পাঠকদের পর্যাপ্ত বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এজন্য আমরা প্রচুর পরিমাণে বইয়ের সমাহার ঘটাতে চাই। আমাদের পাঠাগারকে একটি আদর্শ পাঠাগারে রূপ দিতে চাই। এজন্য আমাদের সবার কাছে সহযোগিতা কাম্য।’

> আরও পড়ুন- রোভারিং চ্যালেঞ্জে দেশসেরা আশিক

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম গোলাম কিবরিয়া সেতুবন্ধনের এ নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের কার্যক্রম বরাবরই প্রশংসনীয়। এবার তাদের পাঠাগার নির্মাণের কাজ আমাদের মুগ্ধ করেছে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় চেষ্টা করবে সেতুবন্ধনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে পাশে থাকার।’ জাহেদুল ইসলাম/এসইউ/এমএস