কৃষি ও প্রকৃতি

পিরোজপুরে রং-বেরঙের ফুল দেখতে ভিড়

অলংকারকাঠী গ্রাম এখন সারাদেশে পরিচিত শধু ফুলের জন্য। হঠাৎ দেখে মনে হবে যেন ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রামটি। সারি সারি হলুদ, লাল, কমলা ও সাদা রঙের ফুলে ফুলে ভরে গেছে স্বরূপকাঠী নার্সারি। পিরোজপুর থেকে স্বরূপকাঠী সড়ক ধরে বরিশালের দিকে যাওয়ার পথে অলংকারকাঠী বেইলি ব্রিজ পার হওয়ার পর থেকে সড়কের দু’দিকে যতদূর চোখ যায়, সর্বত্রই নানা রঙের ফুলের সমাহার।

Advertisement

জানা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে উপজেলার আকলম, অলংকারকাঠী, সুলতানপুর, সংগীতকাঠী, আরামকাঠীসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামে ফুলের চাষ হচ্ছে। সরেজমিনে নার্সারিগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অলংকারকাঠী ব্রিজ থেকে উত্তর শর্ষিনা পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা শতাধিক নার্সারিতে চারা উৎপাদনের ধুম পড়েছে। একইসাথে জমে উঠেছে ফুলের চারা বেচাকেনা। তিন গ্রামের অংশ বিশেষ নিয়ে ওই পল্লি গড়ে উঠলেও ইতোমধ্যে অলংকারকাঠী নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। তিন হাজারেও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে অলংকারকাঠী। সেখানে সকাল-সন্ধ্যা লেগে থাকে ফুলপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়।

> আরও পড়ুন- শীতে যে ফুলগুলো চাষ করবেন 

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে পৌর শহরের পাশের গ্রাম উত্তর শর্ষিনা, অলংকারকাঠী ও কৃষ্ণকাঠী গ্রামের অংশ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের দুই ধারে ওইসব নার্সারি অবস্থিত। ২০০২ সালে অলংকারকাঠী বেইলি ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে কৃষ্ণকাঠী গ্রামের একখণ্ড জমি নিয়ে পানাউল্লাপুর গ্রামের মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন বৈশাখী নার্সারি। এর কয়েক বছর পর জাহীদুল ইসলাম পলাশ প্রতিষ্ঠা করেন ছারছীনা নার্সরি। একই সময় গড়ে ওঠে তৌহিদের আশা নার্সারি। বর্তমানে ওই সড়কের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সড়কের দুই ধারে কহিনুর নার্সারি, আশা নার্সারি, নিরব নার্সারি, রুবেল নার্সারি, নেছারাবাদ নার্সারি, আদর্শ নার্সারি, ফারিয়া নার্সারি, নেছারিয়া নার্সারিসহ বিভিন্ন নামের নার্সারি গড়ে ওঠে।

Advertisement

এসব নার্সারি থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার ফুলের চারা ও বিভিন্ন গাছ-গাছালির চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকার শতশত মানুষ তার নিজের বা সরকারি ঠিকাদারী কাজে সরবরাহের জন্য চারা কলম কিনে নেন। শীত মৌসুম চলে শুধুই ফুলের চারা কলম।

ছারছীনা নার্সারির পলাশ ও আশা নার্সারির তৌহিদ জানান, নার্সারিগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতি ও রঙের গোলাপ ছাড়াও ডালিয়া, কেনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গান্ধা, গাদা, জিনিয়া, ফ্লকা, সালভিয়া, কেমিস্ট, স্যালোনিয়া, ডেইজি, গ্যাজোনিয়া, স্নবল, বারবিন, কেনিডোলাসহ বহু প্রজাতির ফুলের চারা পাওয়া যায়। শ্রেণিভেদে একেকটি চারার দাম ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। নাইট কুইনসহ উন্নত জাতের ফুলের চারা পাওয়া যায় এসব নার্সারিতে। এছাড়া ওই সড়কের জগৎপট্টি এলাকায় রয়েছে আরো ৫টি নার্সারি।

> আরও পড়ুন- ফুলের নাম পাখিফুল 

নার্সারি মালিক শাহাদাৎ হোসেন ও পলাশ জানান, ঢাকার বীজ বিক্রির দোকান ও বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্টদের কাছ থেকে বীজ কিনে আশ্বিন মাসে বীজতলা করে বীজ বপন করতে হয়। ১৫-২০ দিন পর চারা গজালে পলিথিন প্যাকেটে স্থাপন করে পানি ও ওষুধ দিতে হয়। ওইসব গাছে অগ্রহায়ণ মাসে ফুল আসতে শুরু করে। চৈত্র মাস পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। জমি চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত মালিক তার নিজস্ব অর্থ ব্যয়ে শ্রমিক, ওষুধ পানির ব্যবস্থা করেন। এজন্য প্রতিটি নার্সারিতে ১০-১৫ জন করে শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করে। নারীদের ৩০০ টাকা ও পুরুষ শ্রমিকদের ৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয়। সবগুলো নার্সারিতে মাসিক বেতনে বাৎসরিক কর্মচারী রয়েছে। ফুলের চারা কলমে নার্সারিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩-১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

Advertisement

বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার নার্সারিগুলো দেখে তিনি বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন নার্সারি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০ হাজার চারা কিনেছেন।

নার্সারির শ্রমিক কহিনুর বেগম ও মারুফা বেগম বলেন, ‘নার্সারিগুলোতে প্রায় শতাধিক নারী কাজ করেন। স্বামীর রোজগারের সাথে তাদের আয় মিলিয়ে বেশ ভালোই কাটছে জীবন। মালিকরা শ্রমিকদের প্রতি ভালো নজর দেন। আমাদের সুখ-দুঃখ দেখেন।’

> আরও পড়ুন- জেনে নিন কাঠ গোলাপের কাটিং পদ্ধতি 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হেনা মোহাম্মদ জাফর বলেন, ‘স্বরূপকাঠীর নার্সারি শিল্প এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এ শিল্পকে বিকশিত করতে কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। নার্সারি মালিকরা যাতে কম সুদে লোন পায়, তার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।’

হাসান মামুন/এসইউ/আরআইপি