আন্তর্জাতিক

প্রাথমিকেই আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে জাপানের শিশুরা!

১৯৮৬ সালে জাপানে যতজন শিশু ও কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করেছিল, ২০১৬-১৭ সালে আত্মহত্যার হার আরও বেড়েছে। ১৯৮৬ সালে আত্মহত্যা করেছিল ২৬৮ জন। ওই সময়ের পর থেকে বিগত বছরগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা পাঁচগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। জাপান সরকারের নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর সিএনএনের

Advertisement

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্কুলে অত্যধিক শাসন, পারিবারিক ইস্যু ও হতাশার কারণে ওই বছর অন্তত আড়াইশো শিশু ও কিশোর-কিশোরী নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। এরা সবাই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করছিল। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নোরিয়াকি কিতাজাকি বলছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে আর এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এটা থামানো দরকার। তবে এ প্রবণতা কেন বেড়েই চলেছে তা জানা নেই ওই কর্মকর্তার।

২০১৫ সালে বার্তা সংস্থা সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন নানে মুনেমাসা নামের এক শিক্ষার্থী। ওইসময় তার বয়স ছিল ১৭। তিনি সিএনএনকে বলেছিলেন, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে যখন স্কুল দীর্ঘদিনের ছুটি দেয় তখন এ সময়টা বাসাতেই কাটাতে হয়। স্কুলে নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীদের কাছে এ সময়টা স্বর্গের মতো। ছুটি শেষে আবার স্কুলেই ফিরতে হয়। স্কুলে ফিরেই শুরু হয় শিক্ষকদের অত্যাধিক শাসন, অতিরিক্ত পড়ার বোঝাসহ নানা ধরনের মানসিক নিপীড়ন, যা শিক্ষার্থীদের কাছে অসহনীয় মনে হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘যখন আপনি একবার মানসিক নিপীড়নের শিকার হবেন তখন আপনার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। তার এ নিপীড়নের কথা অন্যের কাছে বলে সাহায্য পাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি আত্মহত্যাকেই শ্রেয় মনে করবেন।’

জাপান ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির দেয়া তথ্য মতে, ২০০৩ সালে আত্মহত্যাকারী শিশু, কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪২৭ জন। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩২১-এ। তবে গত অর্থবছরে তা আবার বেড়ে যায়।

জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার এ হার কমাতে জাপান সরকার ২০১৬ সালে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনায় ২০২৬ সালের মধ্যে আত্মহত্যার হার কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে মনোরোগবিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয় এবং শিক্ষার্থীরা যাতে তাৎক্ষণিক সাহায্য পায় সেজন্য ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন চালু করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কোজু মাতসুবায়াশি জাপান টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এ মর্মান্তিক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। তারপরও চরম বাস্তবতা হলো প্রতিবছরই শত শত শিক্ষার্থী নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে।’

Advertisement

‘কত দ্রুততম সময়ে সাহায্য পাওয়া যায় তা শিক্ষার্থীদের জানানো খুবই অপরিহার্য হয়ে গেছে....কারণ একবার তারা এ সমস্যার সম্মুখিন হলে তা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা কঠিন থেকে আরও কঠিনতর হয়ে যায়। যতক্ষণ না তারা বাঁচার কোনো অবলম্বন খুঁজে না পায় ততক্ষণ তারা অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারের দিকে ঝুঁকে যায়,’-বলেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

এসআর/এমএস