জাতীয়

শেষ অধিবেশনে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার আশা

শেষ হয়েছে চলমান দশম জাতীয় সংসদের শেষ ও ২৩তম অধিবেশন। সংসদের শেষ অধিবেশনে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার আশা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা। শেষ অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

Advertisement

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, চিফ হু্ইপ আ স ম ফিরোজ, বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমদসহ অনেকেই বিদায় নেন। আগামী সংসদে আবারও আসবেন বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, যদি কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, যুদ্ধ বিগ্রহ না হয়, তাহলে এটাই শেষ অধিবেশন। আবারও যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে কী কী করব তা ঠিক করে রেখেছি।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, কাউকে নিশ্চিহ্ন করার পথে না যাই আমরা। আমি ২০ বছর ধরে সংসদে আছি কিন্তু এমন ভালো সংসদ দেখিনি।

Advertisement

তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমরা আজকে সবাই চলে যাব যার যার জায়গায়। যথা সময়েই নির্বাচন হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেই রীতি অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনকালে সরকার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আবার আসিব ফিরে এই প্রত্যাশা নিয়েই আমরা ফিরে যাব।’

বিল পাসের রেকর্ড শেষ অধিবেশনে

‘শেষ অধিবেশনগুলোতে বিল পাসের রেকর্ড লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে ২২তম অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস হলেও ২৩তম অধিবেশনে ১৯টি বিল পাস হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর শুরু হয়ে সংসদের শেষ অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল ২৫ অক্টোবর। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত মাত্র ৯টি বিল বা আইন পাস হয়েছিল। কিন্তু আরও অন্যান্য বিলগুলো পাস করার জন্য ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। অধিবেশনের ৮ কার্যদিবসে এতগুলো বিল পাসের জন্য সংসদের আইন শাখা ও এমপিদের তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি রাতে সংসদে বিল উত্থাপন করে বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে সে রাতেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের বৈঠক অনুষ্ঠানেরও রেকর্ড গড়ে এই সংসদ। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন রাতে সম্পূরক কার্যসূচি এনে বিল ও বিলের রিপোর্ট উপস্থাপিত হয়েছে।

উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার রেকর্ড

Advertisement

দশম সংসদেও ৪১০ তম কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩৮ দিন উপস্থিত ছিলেন। আর বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ২৪১ দিন। আগের কোনো বিরোধীদলীয় নেতা কখনই এতদিন উপস্থিত ছিলেন না। বিরোধীদল হিসেবে সব অধিবেশনে উপস্থিত থেকে রেকর্ড গড়েছে জাতীয় পার্টি। এই সংসদে ১৯৮টি বিল পাওয়া যায়, শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত ১৯৩টি পাস হয়।

নবম সংসদের ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন ৩৩৬ দিন। আর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন।

শেষ অধিবেশনে যেসব বিল পাস

শেষ হওয়া অধিবেশনে ১৯টি বিল পাস হয়েছে। এগুলো হলো, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস আইন, ২০১৮, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল বিল ২০১৮। অন্যগুলো হলো- শিশু (সংশোধন) বিল-২০১৮, হাউজিং এ- বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বিল-২০১৮, ওজন ও পরিমাপ মানদ- বিল-২০১৮, সরকারি চাকরি বিল-২০১৮, বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৮, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিল-২০১৮, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বিল-২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্য বিল-২০১৮, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) বিল-২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্য বিল-২০১৮, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮, বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বিল-২০১৮, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বিল-২০১৮, বাংলাদেশ স্টান্ডার্স এ- টেস্টিং ইনস্টিটিউট বিল-২০১৮, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বিল-২০১৮, মৎ্যি সঙ্গ নিরোধ বিল-২০১৮ এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিল-২০১৮।

কোন সংসদের কত কার্যদিবস

সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা জানায়, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল। এ সংসদের মোট ২৩টি অধিবেশনে মোট ৪১০ কার্যদিবসে পাস হয় ১৯৩টি বিল। তবে নবম জাতীয় সংসদে পাস হয়েছিল মোট ২৭১ বিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ বড় একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভোট বর্জনের ভেতর দিয়ে গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ। নানা ঘটনার কারণে এ সংসদ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার অনন্য নজির স্থাপন করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতের অনুপস্থিতির কারণেও এই সংসদ ইতিহাসের পাতায় অনন্য হয়ে থাকবে।

সিপিএ ও আইপিইউ এর প্রতিনিধি এই সংসদের

দশম সংসদ আরও দু’টি ঘটনার জন্য ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এই সংসদের দু’জন সদস্য আন্তর্জাতিক দু’টি ফোরামের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।

এই সংসদের যত কার্য দিবস

দশম এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদে মোট ২৩টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ৪টি অধিবেশন, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ৫টি, ২০১৭ সালে ৫টি এবং ২০১৮ সালে ৫টি । প্রথম অধিবেশনের কার্য দিবস ছিল ৩৬দিন, দ্বিতীয় অধিবেশন ২৩ দিন, তৃতীয় অধিবেশন ১৪ দিন, চতুর্থ অধিবেশন ১০ দিন, ৫ম অধিবেশন ৩৯ দিন, ৬ষ্ঠ অধিবেশন ২৬ দিন, ৭ম অধিবেশন ৮ দিন, ৮ম অধিবেশন ১২ দিন, ৯ম অধিবেশন ২৭ দিন, ১০ অধিবেশন ৯ দিন, ১১তম অধিবেশন ৩২ দিন, ১২তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৩তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৪তম অধিবেশন ৩২ দিন, ১৫তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৬তম অধিবেশন ২৪ দিন, ১৭তম অধিবেশন ৫ দিন, ১৮তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৯তম অধিবেশন ৩৫দিন, ২০তম অধিবেশন ৫ দিন, ২১তম অধিবেশন ২৫ দিন, ২২তম অধিবেশন ১০ দিন, ২৩তম অধিবেশন ৮ দিন। মোট ৪১০টি কার্যদিবস অনুষ্ঠিত হয়।

বিল পাস নিয়ে টিআইবি যা বলল

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী এমপিদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা হলেও মাত্র সাত শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে আইন প্রণয়ন কাজে। সংসদে একটি বিল পাস হতে গড়ে ‘মাত্র’ ৩৫ মিনিট সময় লাগে। বিলের খসড়ায় জনমত যাচাই-বাছাইয়ের সব প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণের চর্চা এখনও সীমিত। এ কারণে ভুলে ভরা অনেক বিল পাস হয়।

এইচএস/জেএইচ/আরআইপি