বিশেষ প্রতিবেদন

নির্বাচনে ‘পুলিশি ছক’ তৈরি

>> ৬৪ জেলার এসপিদের সদর দফতরে ডেকে আইজিপির ব্রিফ >> চলছে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা >> সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে দেয়া হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্ব

Advertisement

কাগজে-কলমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষা করলেও ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সদর দফতরে ডেকে ব্রিফ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

ব্রিফে নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া এলাকার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোর তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালসহ বিগত সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাগজে-কলমে ‘পুলিশি পরিকল্পনার ছক’ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে, ভোট চলাকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে নেয়া হচ্ছে প্রস্তুতি।

Advertisement

নির্বাচনের আগে ভিআইপি, রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারদের কেন্দ্রে যাওয়া, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ভোটগ্রহণের সময় কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন এবং বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের বিশেষ বাহিনী স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী কয়েকদিন দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে পুলিশকে মাঠে রাখা এবং সেসময় পুলিশ সদস্যদের ১৬ ঘণ্টা করে ডিউটির বিশেষ রোস্টারও তৈরি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নির্বাচন অস্থিতিশীল করতে জঙ্গি ও কয়েকটি মহল চক্রান্ত করছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশের একটি ইউনিট। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে হত্যা করে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্তের চেষ্টা করছে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ। পুরনো জেএমবি’র একাংশের শীর্ষ নেতা তৌকির ওরফে তৌকি ওরফে গোপাল রাজশাহীর ইসাবা প্রধান বুলবুল ওরফে সোহাগকে অবহিত করে যে, ইমরানকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলাকা রেকি করা হয়েছে।

Advertisement

এছাড়া সম্প্রতি সারাদেশে জঙ্গিদের রাসায়নিক হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গোপন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে সারাদেশের বিশেষায়িত মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে বার্তা দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার জমা দেয়া প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে জানায় যে, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জেএমবি সদস্যরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। এজন্য তারা আসামের মুর্শিদাবাদ, মালদা ও নাদিয়া জেলা থেকে কর্মীসংগ্রহ করেছে। কেনা হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সুইসাইডাল ভেস্ট।’

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র পাওয়ার পর পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম নির্বাচনের সময় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেবে। তবে ইতোমধ্যে আইজিপি জেলা এসপিদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি।’

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘র‌্যাব সৃষ্টির পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে আমরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করি। এবারের নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব মাঠে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

তবে এবার নির্বাচন মাঠের নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সাইবার নিরাপত্তায়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি, র‌্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের বিশেষায়িত সাইবার সিকিউরিটি টিম ২৪ ঘণ্টা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি করবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা ফেসবুকের জনপ্রিয় ও সর্বাধিক মেম্বারের গ্রুপগুলোতে অ্যাড হয়ে তাদের পোস্টগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। এছাড়া জনপ্রিয় প্রায় শতাধিক ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনসহ সংশ্লিষ্ট মডারেটরদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে।

সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যদি কেউ উস্কানিমূলক গুজব তৈরি করে এবং তা পোস্ট করে তাহলে সেসব পোস্ট ডিলেটে (মুছে ফেলতে) তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দেয়া হবে অ্যাডমিনদের।

নির্বাচনের সময় সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নজরদারি করা সাইবার সিকিউরিটি টিমগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স।

এ প্রসঙ্গে এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স থেকে সব সাইবার নিরাপত্তা ইউনিটগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে। জনগণের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে- এমন যেকোনো ধরনের পোস্ট দেখলেই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের পোস্ট তাৎক্ষণিক নজরে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’ এআর/এমএআর/আরআইপি