প্রথম ম্যাচেই ইনজুরির কারণে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান তামিম ইকবাল, বাঁহাতের পুরনো ইনজুরিতে শেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। যে ৪ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব, সেগুলোতে ব্যাটিংটা ঠিক সাকিবসুলভ হয়নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। এমতাবস্থায় টপঅর্ডার ও মিডলঅর্ডারে বিশ্বসেরা এ দুজনের অভাব পূরণে দায়িত্ব নিতে হতো তরুণ কাউকে।
Advertisement
সে দায়িত্ব বেশ দারুণভাবেই পালন করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন, ফাইনাল ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন ওপেনার লিটন দাসও। আর টুর্নামেন্ট জুড়েই মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে ছিলো সেই পুরনো ছন্দের আভাস। অধিনায়ক মাশরাফিও মানছেন টুর্নামেন্টের ইতিবাচক দিক ও প্রাপ্তি মূলত লিটন, মিঠুন ও মোস্তাফিজই।
টুর্নামেন্টের একদম প্রথম ম্যাচে মাত্র ১ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ, ৩ রানের মাথায় ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। দল তখন কঠিন চাপে। মুশফিকুর রহিমের সাথে তখন ১৩১ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন মিঠুন, খেলেন ৬১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। সে ম্যাচে মিঠুনের এ ইনিংস চাপা পড়ে যায় মুশফিকের ১৪৪ ও তামিমের এক হাতে ব্যাটিং করার বীরত্বের কাছে।
একইভাবে আড়াল হয়ে যায় মিঠুনের দ্বিতীয় অর্ধশত রানের ইনিংসটিও। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আবারও মুশফিকের সাথে ১৪৪ রানের জুটি গড়েন মিঠুন। আসরের দ্বিতীয় ফিফটিতে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যান। আবারও জয়ের ভীত পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আড়ালেই থেকে যান মিঠুন।
Advertisement
টপঅর্ডারে পুরো টুর্নামেন্টেই রানের বাইরে ছিলেন লিটন দাসসহ বাকিরা। একদম শেষ ম্যাচে এসে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেন ওপেনার লিটন। মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে ১২১ রানের জুটি গড়েন তিনি, নিজেও খেলেন ১২১ রানের ইনিংস। তার ব্যাটেই মূলত বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। লিটন পঞ্চাশ পেরুনোর পর ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে তাকে সাহস দেন অধিনায়ক মাশরাফি। জানিয়ে দেন লিটনের প্রতি তার ভরসার কথা।
আর পুরো টুর্নামেন্টেই অসাধারণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ৫ ম্যাচে ৪২ ওভার বোলিং করে ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৪০ করে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে তার বোলিংয়ে দেখা গিয়েছে সেরা সময়ের ছন্দ, কাটার-স্লোয়ারে পরাস্ত করেছেন ব্যাটসম্যানদের।
তাই এশিয়া কাপ মিশন শেষ করে দেশে ফেরার পরে অধিনায়ক মাশরাফির কণ্ঠেও শোনা গেল এদের নিয়ে প্রশংসার কথা। তবে মাশরাফি এখনই লিটন বা মিঠুনকে পাশ মার্ক দিতে রাজি নন। তার মতে এশিয়া কাপে যে সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন লিটন ও মিঠুন, সেটি ধরে রাখতে পারলেই মিলবে সফলতা।
এশিয়া কাপের ইতিবাচক দিকগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অনেক কিছুই আছে। তবে শুরুতেই মিথুন ও লিটনের কথা বলতে হয়। আমাদের দুটি জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই দুই জায়গার জন্য আমরা যোগ্য কাউকে খুঁজছিলাম। সেই দুই জায়গায় লিটন ও মিঠুন পারফর্ম করেছে, এটা খুবই ইতিবাচক। এখন ওরা কতটুকু উপরে নিয়ে যেতে পারবে, সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এক দুই ইনিংসে বলা যায় না সে ফর্মে আছে কি না, তবে আশা করি ওরা বুঝতে পারেছে তাদের সামর্থ্য আছে, এই ধরনের মঞ্চে পারফর্ম করার।’
Advertisement
‘এছাড়া মুস্তাফিজ আবার আগের মত ফিরে আসছে ধীরে ধীরে, এটা খুবই আশা জাগানিয়া। আর দল যেভাবে চেষ্টা করেছে, আশা করি ওরা বুঝতে পারবে, যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে শতভচাগ চেষ্টা করলে যে কোন কিছুই সম্ভব। এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারলে খুব ভাল হবে।’
আলোচনা প্রসঙ্গে চলে আসে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা। বিদেশের মাটিতে প্রতিকূল আবহাওয়া ও চাপের মুখে এশিয়া কাপ খেলাটা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সহায়তা করলো কি না জানতে চাওয়া হলে মাশরাফি জানান, এশিয়া কাপটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি না হলেও প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরুর একটি ধাপ বলা যায়।
তিনি বলেন, ‘এভাবে বলা কঠিন, কারণ বিশ্বকাপের এখনো ৮-১০ মাস বাকি। এর আগেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ আছে। ততদিন দলে কে থাকবে কে থাকবে না এটা বলা কঠিন। তবে প্রক্রিয়াটা শুরু হচ্ছে এখন থেকে। নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে হয়তো পুরো দমে শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে দল দাঁড় করানো খুব জরুরী।’
এসএএস/এমএস