ধর্ম

ফেসবুক টুইটারের ব্যবহার : ইসলাম কী বলে?

দুনিয়ায় প্রত্যেক নতুন কাজে নিষেধমূলক কোনো শরিয়তসম্মত দলিল পাওয়া না গেল তা বৈধ। ফিকহের পরিভাষায় প্রত্যেক বস্তুর মৌলিকত্ব হল তা জায়েজ হবে। কিন্তু ফেসবুক টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা যাবে কি?

Advertisement

ফেসবুক, টুইটার কিংবা অন্য যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে যদি ইসলামি শরিয়তের নিষিদ্ধ কোনো কাারণ পাওয়া না যায় তবে এ সব ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

তবে অপরিচিত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, গুগলেপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড-এর অবাধ অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফি, অসামাজিক কাজ ও সাইবার অপরাধমূলক কাজ হলে কোনোভাবেই ইসলামি শরিয়তে তা বৈধ নয়।

যেহেতু দুনিয়াবী ও ভোগ্য সামগ্রির ক্ষেত্রে প্রত্যেক নতুন জিনিসের মূলনীতি হল তা বৈধ হবে। তবে যদি ইসলামি শরয়ি আইনে নিষেধমূলক কোনো কারণ পাওয়া যায়, তবে তা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন > ছেলে-মেয়েদের অবাধ চ্যাটিং সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

যে বস্তুর মাঝে নিষেধমূলক কোনো বিষয় পাওয়া যাবে না, এমন নতুন জিনিস ব্যবহারের বৈধতা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘ (হে রাসুল!) আপনি বলুন, আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে?’ (সুরা আরাফ : ৩২)

মানুষ নিজের থেকে কোনো বস্তুকে হারাম করতে পারবে না। দুনিয়াতে সে সব জিনিসই হারাম যা আল্লাহ তা তার রাসুল হারাম করেছেন। সুতরাং যে বস্তু হারাম হওয়ার জন্য কুরআন বা হাদিসে নেই। হুট করেই তা হরাম বলে রায় দেয়া কারো জন্যই যুক্তিসঙ্গত নয়। হাদিসে এসেছে-

Advertisement

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে যা হালাল করেছেন, তা হালাল, আর যা হারাম করেছেন, তা হারাম। আর যেসব বিষয়ে কিছু বলেননি, তা ক্ষমাকৃত। আল্লাহর ক্ষমা গ্রহণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তা কখনোই ভুলে যান না (যা উল্লেখ করা প্রয়োজন)। অতঃপর তিনি (প্রিয়নবি সুরা মরিয়মের ৬৩ নং আয়াত) তেলাওয়াত করলেন- ‘তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না।’ (মুসনাদে বাজ্জার, মুস্তাদরেকে হাকেম, নাসাঈ কুবরা)

ফেসবুক, টুইটারসহ প্রযুক্তি সব আবিষ্কার অবশ্যই আল্লাহ তাআলা নেয়ামত। যদি তা সঠিক সুন্দর ও কল্যাণের কাজে ব্যবহার করা হয়। আর তা যদি অসামাজিক কার্যকলাপ কিংবা কল্যাণহীন কাজে ব্যবহার করা হয় তবে তা ব্যবহার করা অবৈধ ও হারাম। কেননা আল্লাহ তাআরা বলেছেন, ‘সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজের নিষেধ কর।’

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কল্যাণের কাজ ও আল্লাহ ভীতিতে একে অপরকে সাহায্য কর আর পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অপরকে সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)

সুতরাং যুক্তির নিরিখেও এ কথা ঠিক যে-আল্লাহ তাআলা মানুষকে মেধা তথা জ্ঞান দিয়েছেন। আবিষ্কারের ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষ মেধার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে। মানুষের আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম একটি তথ্য প্রযুক্তি তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এর মাধ্যমে কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে।

সুতরাং মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, গুগলেপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে কল্যাণমূলক কাজ করবে কুরআন-হাদিস নির্দেশিত অন্যায় ও খারাপ থেকে মানুষকে বিরত রাখার কাজও এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করবে, তা তার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, গুগলেপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড-এর মাধ্যমে গোনাহের কাজ না করার তাওফিক দান করুন।

দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণমূলক কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। অযথা সময় নষ্ট করার প্রবনতা থেকে রক্ষা করুন।নারী-পুরুষের অবাধ অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফির মতো তথ্য আদান-প্রদানসহ যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি