ফিচার

উপকূলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন তিনি

উপকূলের দুর্দশার কথা ভাবতে ভাবতে যার ঘুম আসে। উপকূল নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে যার ঘুম ভাঙে। তিনি গভীর রাতেও খবরের খোঁজে উপকূলের কোন এক অচেনা, মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কিংবা বিপন্ন দ্বীপে অবস্থান করেন। ভাবনায় কেবল উপকূল পরিবর্তনের চিন্তা। উপকূলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন, বিপন্নতার গল্প খবরের শিরোনামে নিয়মিত তুলে ধরায় তিনি পেয়েছেন ‘উপকূল বন্ধু’ উপাধি ও সম্মাননা। বলছিলাম উপকূল ঘুরে কাজ করা সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টুর কথা।

Advertisement

সর্বপ্রথম যিনি ‘উপকূল দিবস’ নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে লেখালেখি শুরু করে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করেন। পরের বছরই যার কল্যাণে সমগ্র উপকূলের ৩৪টি স্থানে একযোগে ‘উপকূল দিবস’ পালন করা হয় এবং সব জায়গা থেকে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন উপকূল দিবসের জনকের উপাধি।

কাজ করতে গিয়ে বহু প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে এগোতে হয় তাকে। তিনি জানেন, ভালো কিছু করতে গেলে প্রতিকূলতা আসবেই। তাই তিনি দমে যাননি। অবিরত ছুটে চলেন উপকূলের পথে পথে। তুলে আনেন শেকড়ের গল্প। যা অনায়াসেই হাজির হয় পাঠক দুয়ারে। শহুরে সাংবাদিকতা ছেড়ে উপকূল নিয়ে সাংবাদিকতা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। শুরু করেন উপকূল নিয়ে সাংবাদিকতা। পূর্ব দিকে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ, পশ্চিমে সাতক্ষীরার শ্যামনগর। বরগুনার কাদামাটি ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা মানুষটি সমগ্র উপকূল এখন চষে বেড়ান।

> আরও পড়ুন- বাংলাদেশি আয়েশার বিজ্ঞানে সাফল্য

Advertisement

তিনি খবর সংগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন একেবারের প্রান্তিক, দুর্গম, বিপন্ন, বিচ্ছিন্ন, পিছিয়ে থাকা জনপদকে। এর শেকড়ে তার আলো ফেলার প্রয়াস। এসব কাজ তিনি করে যান ক্লান্তিহীনভাবে। বিপন্ন সম্প্রদায়, জেলে জনগোষ্ঠী, ভাঙনে নিঃস্ব, বাস্তুচ্যূত, ঠাঁইহীন মানুষ তার খবরের নায়ক। এসব মানুষ তাকে কাছে পেলেই যেন ভরসা পান। আপন মানুষের কাছে যেভাবে মনের কথা বলা যায়, সেভাবে তার কাছে সব সমস্যার গল্প খুলে বলেন তারা।

এসব মানুষ তার মায়া, আবার তিনি এসব মানুষের মায়া ছাড়তে পারেন না। তাই তো বারবার তাদের দ্বারেই ছুটে যান। ওই খবরের নায়করা তিনি দূরে থাকলেও মুঠোফোনে তাকে কাছে পান। বিনিময় করেন জীবন সংগ্রামের যত চিত্র। এসব মানুষের অভাব-অভিযোগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার গল্প তিনি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় প্রচারমাধ্যমে।

উপকূলের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে একের পর এক সিরিজ, বিশেষ প্রতিবেদন, ফিচার সংবাদ লিখে চলেছেন তিনি। এর আগেও তিনি বেশকয়েকটি মূলধারার দৈনিকে কাজ করেছেন। এসব কাজে মিলেছে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও। টানা তিনবার উপকূল নিয়ে খবর লিখে অর্জন করেছেন ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’। তাছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অসংখ্য পুরস্কার তার ঝুলিতে।

তিনি শুধু খবরই লেখেন না। লেখার সঙ্গে যুক্ত করেছেন উপকূলের ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ুয়াদের। প্রচলন ঘটান উপকূল বিষয়ক দেয়ালপত্রিকা ‘বেলাভূমি’র। যা নিয়মিত উপকূলের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ হয়। এখানকার খুদে সংবাদকর্মীদের একদিকে যেমন প্রতিভার বিকাশ ঘটছে, অন্যদিকে এরা বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছে। আবার এরাই জাতীয় কিংবা স্থানীয় গণমাধ্যমে উপকূল নিয়ে লেখালেখি করে যাচ্ছে।

Advertisement

> আরও পড়ুন- নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ডিভাইস তৈরি করলেন ডা. জোবায়ের

তার অনুপ্রেরণায় অনেকেই আজ উপকূল নিয়ে ভাবে, উপকূলের সংবাদ সংগ্রহ করে এবং লেখে। ফলে উপকূলে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর খবর তাৎক্ষণিক নীতিনির্ধারণী মহলে সাড়া জাগাচ্ছে। এ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘উপকূল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়।

তিনি উপকূলের তরুণ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে গড়ে তুলেছেন ‘আলোকযাত্রা-কোস্টাল ইয়ুথ নেটওর্য়াক’। যার মাধ্যমে উপকূলের এক প্রান্তের তরুণরা অন্য প্রান্তের তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। এ তরুণরাই বর্তমান উপকূলজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেদের যুক্ত রাখছেন। বৃক্ষ রোপণ, ঈদে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো, পরিবেশ অনুসন্ধান, দিবস পালন, লেখালেখিসহ বহুমুখী কাজে তরুণ প্রজন্ম সময় দিচ্ছে। যার ইতিবাচক ফল হচ্ছে- এরা বিপথগামী হচ্ছে না। উপকূলের তরুণদের নিয়ে এ বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় তাকে এখন ‘উপকূল প্রজন্মের আইকন’ বলা হয়।

এসব কাজের শুরুর গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপকূল অঞ্চল দেশের মূলধারা থেকে অনেক অবহেলিত। যখন দেখি উপকূলের গল্প কেন্দ্রের মূলধারার গণমাধ্যমে তেমন উঠে আসছে না, তখনি শহরের সাংবাদিকতা আমাকে আকড়ে ধরতে পারেনি। কারণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে সংকটের অভাব নেই। আর এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেই অবারিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতেই উপকূল অঞ্চল এগিয়ে যাবে। সে ভাবনা থেকেই উপকূল নিয়ে কাজ শুরু করি।’

> আরও পড়ুন- রোভারিং চ্যালেঞ্জে দেশসেরা আশিক

উপকূলজুড়ে বর্তমানে কী ধরনের কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুরুটা যদিও লেখালেখির মাধ্যমে করেছি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয় স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে দেয়ালপত্রিকা প্রকাশ, সবুজ সচেতনতায় ‘সবুজ উপকূল’ কর্মসূচি, উপকূলের তরুণদের নিয়ে ইয়ুথ নেটওর্য়াক, ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস পালন এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি। আমি আশা রাখি এর মাধ্যমেই উপকূলকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

এসইউ/পিআর