প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল এবং মালদ্বীপ ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের বন্ধু দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা গেছে। ভারতের কি তবে বন্ধু কমছে?
Advertisement
কাঠমান্ডুতে বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফিরে আসার পরই বড় ধাক্কা খেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধাক্কা খেলো তার সরকার। কথা ছিল ভারতে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের যৌথ মহড়ায় শামিল হবে বিমসটেকভুক্ত সাত দেশ ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা ও ভুটান। শেষ মূহুর্তে নেপাল ও থাইল্যান্ড বেঁকে বসলো।
ফলে দিল্লি পড়েছে অস্বস্তিতে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ি মনে করেন, এর কারণ মোদি সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং চীনের প্রভাব। সাম্প্রতিক বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর মোদি সরকার নেপাল ও থাইল্যান্ডের কাছ থেকে এটা আশা করেনি। দু’দেশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সেনা পাঠাতে পারবে না। বড়জোর পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে।
এ ধরনের উত্তর বিশেষ করে নেপালের কাছ থেকে দিল্লি আশা করেনি। কারণ নেপাল ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক কারণে চিরদিনই ছিল ভারতের ঘনিষ্ট বন্ধু। কাছের দেশ। তাছাড়া চলতি মাসেই ভারতের নাকের ডগা দিয়ে চীনের সঙ্গে ১২ দিনের সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে নেপাল।
Advertisement
চলতি বছরে ক্ষমতায় আসার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি ওলি দেশের পররাষ্ট্র নীতিতে চীনকে অগ্রাধিকার দেবার কথা বলেছিলেন। তার মতে, একটি নির্দিষ্ট দেশের উপর নির্ভর করতে চায় না নেপাল। গত কয়েক মাসে নেপাল যে ক্রমশই ঝুঁকেছে চীনের দিকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। কিছুদিন আগেই চীন নিজেদের বন্দর খুলে দিয়েছে নেপালের জন্যভ পরিবহণ ও যোগাযোগ বাড়াতে চীন-নেপাল সমঝোতাপত্র সাক্ষর হয়েছে। তারপরই ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ সামরিক মহড়া বয়কট করলো নেপাল।
প্রাথমিকভাবে এর পেছনে দু’টো দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে। একটি জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি, আরেকটা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি। জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে যেখানে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ঘটেছে, সেখানে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি অনেকটা দূরে সরে গেছে উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণে। বিগত কয়েক বছরে ভারতের রাজনীতিতে একটা উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ভারতকেন্দ্রিক মতবাদ বা অন্য মতাদর্শের প্রতি অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে। এটা ভারতের পক্ষে ক্ষতিকর। এর কারণে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সার্কের বিভিন্ন আলোচনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলংকার সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে।
পাশাপাশি প্রতিবেশী মালদ্বীপের সঙ্গেও চলছে ভারতের সংঘাত। বর্তমান মালদ্বীপ সরকারও চীনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মালদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় হেলিকপ্টার সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছে মালদ্বীপের নতুন সরকার। অন্যদিকে চীন সেখানে বানাচ্ছে নতুন বিমানঘাঁটি।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
Advertisement
টিটিএন/এমএস