মতামত

ইতিহাসের রাখাল রাজা : বঙ্গবন্ধু ও কৃষি

...এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান? যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি, চোখে নীলাকাশ বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি। যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান...

Advertisement

বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে উত্তাল ঐশ্বর্য আর স্নিগ্ধ শান্ত স্বভাবের একটি সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অতনু সিক্ত নীলাম্বরীতে দেহঘেরা উর্বশী পত্র পল্লবে বিকশিত তেপান্তরের সোনালী মাঠ আামদের মায়াবি হাতছানি দেয়া।

অনাদিকালের রোদ বৃষ্টি নদী-পলিভূমি আর মানুষের সৃষ্টিশীল বিবর্তন ধারার কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে জন্ম নিয়েছিলো বাঙালি জাতিসত্তার ভ্রুণ। কৃষি কৃষ্টি সমাজ সংস্কৃতি আর মুক্তিকামী রাজনীতির যৌক্তিক ধারাবাহিকতায় নিরন্তর ত্যাগ দানে মানে পুষ্ট হয়ে সে ভ্রুণ পূর্ণাঙ্গরূপ পায় তখনই যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জনগণ ও জনসমুদ্র সমার্থক হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম কৃষি প্রধান বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অন্যতম ভিত্তি ছিলো কৃষি। তাইতো স্বাধীনতার ঊষালগ্নে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি দেশে সবুজ বিপ্লবের/কৃষি বিপ্লবের ডাক দেন। শুরু হয় কৃষিতে গ্রামীণ উন্নয়ন আর আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার। মওকুফ করেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনার দায়। প্রত্যাহার করেন লাখ লাখ কৃষি ঋণের সার্টিফিকেট মামলা; ভূমিহীন কৃষকের নামে বিতরণ করা হয় খাসজমি; দেশে প্রথম প্রবর্তন করা হয় কৃষি ঋণ ব্যবস্থার এবং ৭৩’এর ৭ নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় কৃষি ব্যাংক; গঠন করা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার তহবিল।

Advertisement

মানসম্মত বীজ, সারের কারখানা প্রতিষ্ঠা, সেচ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুকরণ, বালাইনাশক কারখানা তৈরি, জমির খণ্ডায়ণ রোধ, বন্যা থেকে রোধে বাঁধ নির্মাণ, কৃষির আধুনিকায়ন যন্ত্রায়ণ, সমন্বিত কৃষি বাস্তবায়ন, জমির প্রকৃতি বুঝে ফসল পলানো, সময় মতো ফসল উৎপাদন, জরিপ করেই কেবল পরিকল্পনা গ্রহণ, রবী মৌসুমে বেশি করে ফসল ফলানোর তাগিদ, শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলাসহ কৃষি উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির অগণিত কার্যক্রম।

যে বজ্র কণ্ঠে স্বাধীনতা সংগ্রাম সে কণ্ঠেই ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত হয়-কৃষিবিদদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি- প্রথম শ্রেণির পদ মর্যাদা।

আকাশেবাতাসে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর অবদান, কৃষিবিদরা ক্লাশ ওয়ান। গৌরবময় এ দিনটি কৃষিবিদরা দেশব্যাপী পালন করে চলেছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। কৃষিবিদদের মর্যাদার স্বীকৃতির ঘোষণাই শুধু নয়, কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় মেধাবীদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বৃত্তি বরাদ্দ বাড়ানো হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় একক ও বহুমূখী কৃষিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

তিয়াত্তুরের ১০নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ধান ব্যতিরেকে বহুমুখী ফসল গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। পুনর্গঠন করা হয় হরটিকালচার বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, সীড সার্টিফিকেশন এজেন্সি, রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণা সমন্বয়ের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। সোনালী আঁশের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাট মন্ত্রণালয়।

Advertisement

১৩/২/৭৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন...খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বুঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়। সুতরাং কৃষি উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্য শস্যের উৎপাদন উন্নতি করতে হবে। ১৯৭২-৭৩ সালে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল এর মধ্যে ১০১ কোটি টাকা শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য রাখা হয়েছিল। এতে তখন থেকেই কৃষির প্রতি, কৃষি উন্নয়নের প্রতি তার যে আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন সবার আগে দরকার খাদ্যের। খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সব উন্নয়ন কার্যক্রম বিফলে যাবে। আর জরিপ করে ভবিষ্যত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উদ্ধুদ্ধ কৃষিবিদ এবং ফসলযোদ্ধা কৃষকের মেলবন্ধনে তাইতো প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিখাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি উন্নীত হয় শতকরা প্রায় ৫ ভাগে। ১৯৭৫-১৯৭৬ সালে খাদ্য উৎপাদন ৮৭ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৩ লাখ টনে। আগস্ট ’৭৫ জায়নামাজের মতো বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে দাঁড়িয়ে বাংলার কৃষক ডুকরে কেঁদে উঠছে- সোনার বাংলা এতিম হয়ে গেছে।

পরপারের স্বর্গোদ্যান থেকে জাতির জনক যেন গেয়ে উঠলেন- কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও। এর সে ধারাবাহিকতায় কৃষি সমৃদ্ধির আন্দোলনের ডাক দিলেন জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা কৃষকরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কৃষক সমাজের অনিবার্য শক্তি এবং গণমানুষের ইচ্ছের প্রতিফলনে তিনি হাল ধরলেন খাদ্য ঘাটতির দিশেহারা দেশের। আত্মনিয়োগ করলেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। হাতে নিলেন কৃষি উন্নয়নের অনেক কাঠামোগত সংস্কার কর্মজজ্ঞ। ফল হলো ’৯৮এর শতাব্দীর দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করেও ৯৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য উৎপাদন।

বিশ্ব স্বীকৃতির মর্যাদাপূর্ণ সেরেস’ পদক তিনি উৎসর্গ করলেন কৃষি প্রধান দেশের জনগণকে। সে সময় কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হয় প্রায় ৩ হাজার ৬ শ’ কোটি টাকা। গ্রহণ করা হয় ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি। বিতরণ করা হয় ১০০০ কোটির টাকার খাদ্য শস্য ঋণ। ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা হয় কৃষি উপকরণ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বোরো মৌসুমে সরবরাহ করা হয় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।

ঐতিহাসিক পানি চুক্তির মাধ্যমে পানি প্রাপ্যতায় চালু হয় জিকে সেচ প্রকল্প। পঁচিশহাজার হেক্টর জমি আসে আবাদের আওতায়। গড়ে তোলা হয় আঞ্চলিক মৃত্তিকা গবেষণার ও ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষার সুযোগ। সমন্বিত বালাই ব্যস্থাপনা নীতি হিসেবে পাশ হয়। পূনঃপ্রবর্তন করা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। কৃষি ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার দিগন্ত প্রসারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬টি কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষক নিবেদিত জননেত্রীর কারিশমা, প্রযুক্তির প্রসার, কৃষকের ঘামঝরানো পরিশ্রম আর প্রকৃতির শুভেচ্ছায় সৃষ্টি হয় ফসল উৎপাদনে নতুন রেকর্ড।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ সেবায় দ্বিতীয়বারের মতো অভিষিক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেখলেন চক্রান্তে আবার পিছিয়ে গেছে দেশের জীবন মানের চাকা। দেশ আবারো খাদ্য ঘাটতির অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে। অর্থ দিয়েও বিশ্বের কোথাও মিলছে না খাদ্য।

মানুষকে ভালবাসার অগাধ বিশ্বাসে কৃষকের দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নে বীজ, সার, জ্বালানি, সেচসহ সব কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করলেন তিনি। ননইউরিয়া সারের দাম কমিয়ে কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে নিশ্চিত করা হলো জমিতে সুষমসার ব্যবহারের সুবর্ণ সুযোগ। ভর্তুকিসহ সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করে উপকরণ প্রাপ্তিতে কৃষক হয়রানি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের সুযোগ দেওয়া হয় ব্যাংক একাউন্ট খোলার এবং উপকরণ সহায়তার অর্থ সরাসরি কৃষকের একাউন্টে প্রদান করা হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য যন্ত্রপাতির মূল্যের শতকরা ২৫ ভাগ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের বিদ্যুৎ বিলের ওপর দেয়া হয় শতকরা ২০ ভাগ হারে রিবেট সুবিধা। শেখ হাসিনার দেয়া প্রণোদনায় দেশের বরেণ্য বিজ্ঞানীদের দ্বারাই উন্মোচিত হয় পাট ও ক্ষতিকর ছত্রাকের জিনোম রহস্য।

প্রধানমন্ত্রীর মহতী উদ্যোগ হতদরিদ্রের জন্য চালু হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। তা বাস্তবায়নে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হচ্ছে। বছরের ৫ মাস দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কার্যক্রম চালু করেছে সরকার। দেশের জনসাধারণের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম, কৃষি সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ, কৃষি পণ্যের বিপণন, কৃষি সহায়তা ও পুর্নবাসন, পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজন কৌশল, কৃষি উপকরণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা, বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেচ কার্যক্রম, দুর্যোগ মোকাবেলা, শস্য সংরক্ষণসহ সামগ্রিক কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে দক্ষতার সাথে। খাদ্য শস্যের পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাতকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বাস্তবমুখী ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন চলছে।

কৃষিবিদদের মর্যাদা নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে শেখ হাসিনা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে জমি বরাদ্দসহ দিক নির্দেশনা দেন কৃষিবিদ ও কৃষকের মর্যাদার প্রতীক পেশাজীবী সংগঠনের প্রাণকেন্দ্র কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ-এর নান্দনিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায়। গুরুত্বারোপ করেন দক্ষ কৃষিবিদ তৈরির। গ্রামীণ অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ে তুলে কৃষকদের স্বাবলম্বী করার দূরদর্শী লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার ধারণার গোড়াপত্তন করা হয়।

কৃষকের হাতে সহজে অর্থ সরবরাহের জন্য সৃষ্টি করা হয় দেশব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও পল্লীকর্ম সহায়ক ব্যাংক। বঙ্গবন্ধু কন্যার সৃষ্ট আলোকিত পথে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের এক রোল মডেল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সক্ষমতা দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অনুসরণীয় উদহারণ। আর এসব কারণেই তিনি নিজে পরিণত হয়েছেন বিশ্ব নেতায়। দেশে এখন খাদ্য উৎপাদন প্রায় ৪কোটি মেট্রিক টন। কৃষক-কৃষিবিদ-সহায়ক নীতি ও প্রণোদনায় ধান উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ৪র্থ, চাল রফতানি হয়েছে শ্রীলংকায়, বাজার খোঁজা হচ্ছে আফ্রিকার দেশে দেশে; সবজি উৎপাদনে ৩য়; আলু উৎপাদনে ৮ম; মৎস্য উৎপাদনে ৪র্থ।

নতুন সমুদ্রসীমা চুক্তির ফলে মৎস্যসহ সম্ভাবনাময় সম্পদ আহরণের অপরিসীম সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার মাটিতে ফলানো ফল ও সবজি রফতানি হচ্ছে বিদেশে। দেশের বীজ সেক্টর পেয়েছে গর্বিত শিল্পের মর্যাদা। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবিত হচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণে সরকারের সহায়ক নীতি আলোক বর্তিকার মতো কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ অভিষিক্ত হচ্ছে চ্যাম্পিয়নশীপে। বিশ্ব স্বীকৃতি মিলছে- ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে ভাসমান সবজি উৎপাদন প্রযুক্তির গর্বিত সত্ত্বাধিকারী বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সাড়ে ৭কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া ছিলো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যেখানে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করেও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের গর্বিত দেশ। কৃষিতে তাক লাগানো এ সাফল্যের নেপথ্যের প্রেরণা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা অর্জনের মহানায়ক, ইতিহাসের রাখাল রাজা, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর প্রদর্শিত স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়নে বাংলার মানুষ এখন স্বপ্ন দেখে তাঁরই কন্যা কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার চোখে। কৃষক ও যুগবান্ধব নীতি, উদার সহায়তা আর কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদার পৃষ্ঠপোষকতায় তাইতো আসে কৃষিতে ধারাবাহিক সাফল্য। যুক্তিপ্রযুক্তি, কৃষি ও কৃষ্টির সদাচারী হয়ে আমরা কৃষিবিদ এবং বাংলার শস্যযোদ্ধা উন্নয়নের মহানায়ক কৃষক সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিয়োজিত আছি নিরন্তর, সানন্দ ভালোবাসায় ।

কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো করে বলবো...একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুলপ্রতীক্ষা মানুষের: কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি?শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন,তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা,জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী ?গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের... বিনম্র শ্রদ্ধা জাতির জনকের প্রতি।ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় তিনি দেখতে চেয়েছিলেন দেশের কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পুরো দায়িত্ব এখন আমাদের সবার। কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় করাই হোক আমাদের চলমান অঙ্গীকার। সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কৃষিই হচ্ছে আমাদের এ অঙ্গীকার পূরণের প্রধান বাহন।

আমাদের সবার সম্মিলিত আন্তরিক এবং কার্যকরী প্রচেষ্টায় আমাদের নিয়ে যাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বোচ্চ সীমায়। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিনির্মাণ করতে পারব স্বনির্ভর সুখীসমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। একটি কথা শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে বা শ্রদ্ধা করেই স্বনির্ভর সোনার বাংলা গড়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর কথাগুলোকে তিল তিল করে কাজে লাগাতে হবে, কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন। তবেই আমরা তার কথা রেখেছি সে কথা বলতে পারব গর্বের সাথে।

কথার চেয়ে কাজ বেশি, পরিকল্পনার চেয়ে বাস্তবায়ন বেশিই হোক আমাদের আন্তরিক অঙ্গীকার। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক আমাদের হৃদয়ের মন মানসিকতার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও কার্যকর বাস্তবায়নের আলোকিত মাধ্যমে। আমরা যেন তখন মাথা উঁচু করে বলতে পারি সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এ দেশে।

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এইচআর/পিআর