সব ঠিক থাকলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে আটক বেগম খালেদা জিয়া ঈদের আগেই মুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
Advertisement
এ মামলায় খালেদার জামিন ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় আদালত জামিন পাচ্ছেন। সর্বশেষ কুমিল্লার মামলায় সোমবার তাকে ছয় মাসের জামিন দেয়া হয়। এখন নড়াইলের মামলায় জামিন পেলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে- জানান আইনজীবীরা। কুমিল্লায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা নাশকতার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয়ার পর সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আইনজীবীরা এমন মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন >> কুমিল্লার নাশকতার মামলায় খালেদার ৬ মাসের জামিন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ চারবার বাড়ান হাইকোর্ট। এছাড়া নিম্ন আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “আজ যে মামলায় জামিন হয়েছে সেটি হচ্ছে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের। অর্থাৎ কুমিল্লার নাশকতার মামলায় আমরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন শুনানিতে ‘এবাউট টু রিজেকশন’ একটি আদেশ দিলেন। বেইল দিলেন না। এবং বললেন, কুমিল্লার আদালতে আবেদন করার জন্য। সেই আদেশ অনুযায়ী আমরা কুমিল্লার কোর্টে আবেদন করেছিলাম। ওই কোর্টে আমাদের আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর আমরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করি, সঙ্গে সঙ্গে জামিনও চাওয়া হয়। দুদিন শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আজ তার আদেশে বললেন, আপিল গ্রহণ করা হলো এবং ছয় মাসের জামিন দেয়া হলো।” মুক্তি পেতে আর কয়টি মামলায় জামিন পেতে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবেদীন জানান, আজ কুমিল্লার আরও একটি হত্যা মামলার আদেশের জন্য রয়েছে। বেলা ২টার দিকে আদেশ দেয়া হবে। আর একটি মামলা ‘৫৬১’ আছে। এছাড়া নড়াইলের একটি মামলা রয়েছে। ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের অফিসে আটকা ছিলেন। ওই সময় কুমিল্লার এক সড়কে ঘটনাটি ঘটে। ক্রিমিনাল জুড়িডিকশনে এজাহার সংশোধনের সুযোগ নেই। এ মামলায় এজাহার সংশোধন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন তো নয়ই তার কোনো জামিন আবেদনই নিচ্ছিল না আদালত। তিনি বলেন, নাশকতার এ মামলায় যত আসামি আছে সবার জামিন হয়েছে। কিন্তু একমাত্র আসামি বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। কিন্তু তার জামিন প্রথমেই হওয়া উচিত ছিল। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুবু উদ্দিন খোকন- দুজনেই বলেন, কুমিল্লার দুই মামলায় জামিন হওয়ার পর নড়াইলের আরও একটি মামলা রয়েছে। নড়াইলের মামলাটি জামিন হলে, আমরা আশা করি বেগম খালেদা জিয়া তাড়াতাড়ি কারাগার থেকে মুক্ত হবেন। খোকন আরও বলেন, সব ঠিক থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদের আগেই বের করার চেষ্টা করবো, ইনশা-আল্লাহ। এর আগে কুমিল্লায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয়া হয়। গত ২৩ জুলাই হাইকোর্ট এক আদেশে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদন ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করে জামিন চান। খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। আদালতে এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ বলেন, কুমিল্লায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। কুমিল্লায় দায়ের হওয়া আরেক মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি হাইকোর্টের একই বেঞ্চে আজ বেলা ২টায় ধার্য রয়েছে। আইনজীবীরা বলেছে, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে আট যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলায় হয়। একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা, অপরটি হত্যা মামলা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। এফএইচ/এমএআর/জেআইএম
Advertisement