প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Advertisement
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মোহাম্মদ আলী (৪০) ও মোসা. নাদিয়া সুলতানা (২৭) ।
তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আবদুস সোবহান গোলাপের নামে চাঁদাবাজি করে আসছিল। মোহাম্মদ আলী কণ্ঠস্বর নকল করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে চাঁদা দাবি করতো। এ ছাড়া অসুস্থতার নামে চিকিৎসার জন্য অথবা ছেলের স্কুলের খরচের নাম করেও অনেকের কাছে টাকা চাইতো তারা।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ) আব্দুল বাতেন।
Advertisement
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পূর্ব-ডিবি)। গোলাপের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা সম্পর্কে তারা ভাই-বোন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল, ছয়টি সিমকার্ড ও দুটি বিকাশ নম্বর জব্দ করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, বেশ কিছুদিন আগেও আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর আরেক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফও এ রকম অভিযোগ করেছিলেন। তার নাম করেও অনেকের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আসামি মোহাম্মদ আলী গোলাপের নাম ব্যবহার করে টাকা চাইতো। তিনি কখনো বলতেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সুযোগ করে দেয়া হবে, কখনো বলতেন কাছের কেউ অসুস্থ হয়েছে, তাদের হেল্প করার জন্য টাকার দরকার। আবার কখনো বলতেন, আমার একজন কর্মী গুরুতর অসুস্থ কিছু টাকার দরকার। আর সেই টাকা তার বোন নাহিদ সুলতানা (২৭) বিকাশের মাধ্যমে তুলতো।
Advertisement
মূলত তারা রাজনৈতিক ব্যক্তি-যেমন এমপি, মন্ত্রী, দলের বড় পোস্টধারী বিভিন্ন নেতা ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মোবাইলের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করতো। এটি একটি চক্র, আমরা ধারণা করছি, তাদের আরও সদস্য থাকতে পারে।
আব্দুল বাতেন বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা চেয়েছে। যাদের কাছে টাকা চেয়েছে তারা হলেন, রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, নিজাম হাজারী এমপি, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন নাহার লায়লা, সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান, গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাসহ আরও অনেকে। হয়তো আরও আছে যারা এখনো অভিযোগ করেনি। আজকের পর হয়তো অনেকেই অভিযোগ করবেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের সম্পর্কে জানা যাবে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর আসামিরা চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কত টাকা আদায় করেছে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
আবদুস সোবহান গোলাপের নাম ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি মোহাম্মদ আলীর কণ্ঠ অনেকটা আবদুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে মিলে। তিনি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। তার নাম ব্যবহার করলে সহজেই মানুষ টাকা দেবে। এ চিন্তা থেকে আসামি নামটি ব্যবহার করেছেন।
‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ আলীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলাম। আমরা দেখেছি তার ফেসবুক প্রোফাইলে গোলাপের ছবি ও নাম ব্যবহার করেছে। এ ছাড়াও তার হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবার সব আইডিতে একই ছবি দেয়া।’
তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের কোনো পেশাও নেই।
জেইউ/এএইচ/পিআর