পঞ্চগড়ে শ্রমিক কল্যাণের নামে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দুটি গ্রুপ পৃথকভাবে মহাসড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে। এতে পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
Advertisement
এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন সড়কে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। যে কোনো সময় শহরে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। শ্রমিক ও মালিকদের চাঁদা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীসহ পথচারীরা। তবে পুলিশ প্রশাসনের দাবি, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা চলছে।
পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন দ্বন্দ্বের পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সাতটি সংগঠন একত্রিত হয়ে মালিক শ্রমিক সংগ্রাম ঐক্য পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করে। কিছুদিন থেকে তারা যৌথভাবে শহরের খোলাপাড়া এলাকায় শ্রমিক কল্যাণের নামে ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা গ্রহণ শুরু করে।
এদিকে, জেলা মোটর-মালিক সমিতির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে এই চাঁদা উত্তোলনের প্রতিবাদ করে জেলা ট্রাক ও ট্যাংক-লরি কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি নামে আরেকটি সংগঠন।
Advertisement
এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে ওই সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঁদা তোলা শুরু করে। তারাও জেলা শহরের শিংপাড়া এলাকায় তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে ট্রাক থামিয়ে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় শুরু করে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পাথর নিতে আসা পাবনার নগরবাড়ি এলাকার ট্রাক চালক মো. আরজু বলেন, পঞ্চগড়ে এর আগে শ্রমিক কল্যাণের নামে সব মিলিয়ে ৬০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। এরপর ১০০ টাকা করা হয়। আজকে মহাসড়কের দুটি স্থানে গাড়ি থামিয়ে ১০০ টাকা করে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হলো। এভাবে আমরা আর কত টাকা চাঁদা দেব? সব টাকা সড়কেই চাঁদা দিতে দিতে শেষ হয়ে যায়।
জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন শ্রমিক কল্যাণের নামে চাঁদা আদায় করে শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় করে আসছি। বয়স্ক শ্রমিক ভাতা, ঈদ বোনাস, দুস্থ শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, শ্রমিকদের মেয়ের বিয়েসহ মৃত্যুজনিত কারণে এ অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু একটি সংগঠন হঠাৎ করে মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করছে। অবিলম্বে তা বন্ধ করা না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেব।
আরেক সংগঠন জেলা ট্রাক ও ট্যাংক-লরি কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মখলেছার রহমান জানান, তাদের পক্ষে ২০-৩০ জন মোটর মালিক রয়েছেন। তারা ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলতে পারলে আমরা কেন পারব না। আমরা প্রায় ৭০০ মালিক তাদের চাঁদা উত্তোলনের প্রতিবাদ করেছি। বাধ্য হয়ে আমরাও শ্রমিকদের কল্যাণে টাকা উত্তোলন শুরু করি।
Advertisement
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) সুদর্শন রায় বলেন, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে শ্রমিক কল্যাণের নামে চাঁদা উত্তোলন নিয়ে যেন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে, এ জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা চলছে। এ নিয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। আশা করি শিগগির সংকট কেটে যাবে।
সফিকুল আলম/এএম/জেআইএম