প্রবাস

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা নাজিব রাজাকের

সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাসেরও বেশি সময় বাকি থাকতেই শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

Advertisement

নাজিব জানান, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে তিনি মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান মোহাম্মদ ভি এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। শনিবার (৭ এপ্রিল) থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে।

রাষ্ট্রীয় তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে নাজিবের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। গত বছরই নাজিব রাজাক নির্বাচনের ডাক দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তবে তা এড়িয়ে গেছেন নাজিব। অভিযোগ রয়েছে, নিম্ন আয়ের পরিবার ও গ্রাম্য ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাদের জন্য বাজেটে সংস্কার আনার জন্য সময় নিচ্ছিলেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী। তার বিএন জোটের জন্য নিম্ন আয়ের পরিবার ও গ্রাম্য ভোটারদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দিলেন নাজিব। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক বিশেষ ঘোষণায় নাজিব বলেন, ‘পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার জন্য রাজা অনুমতি দিয়েছেন। ৭ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে।’

Advertisement

আবারও নির্বাচিত হলে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার করে নাজিব রাজাক বলেন, ‘যদি বিএন জোট জয় পায়, তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দেশকে আরও বড় ও ব্যাপকতর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

মালয়েশিয়ার নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অবশ্যই ভোটগ্রহণ হতে হবে। শিগগিরই ভোটের তারিখ নির্ধারণের জন্য মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশন বৈঠক করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নির্বাচনী সীমারেখা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের নেয়া পরিকল্পনাটিরও অনুমোদন দিয়েছে নাজিব সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের জোটের শাসনকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সীমানা পুনর্নির্ধারণের কারণে নাজিব রাজাক নির্বাচনে সুবিধা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সমালোচকরা একে নির্বাচনে কারচুপির উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এ সীমারেখার মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যক বিরোধীদলীয় ভোটারকে অল্প সংখ্যক আসনে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হবে।

এদিকে পর্যাপ্ত কাগজপত্র না থাকার অভিযোগ তুলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে মালয়েশিয়া। তবে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে দলটি। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রেজিস্ট্রার অব সোসাইটিজের দফতর থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বৃহস্পতিবার ওই দফতরের লেখা এক চিঠি হাতে পাওয়ার দাবি করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মাহাথিরের নবগঠিত রাজনৈতিক দল প্রিভুমি বারসেতু মালয়েশিয়া ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হলো।

Advertisement

ওই দফতরের নিবন্ধক সুরাওয়াতি ইবরাহিম ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে দলটি। তবে তা করতে ব্যর্থ হলে এই আদেশ স্থায়ী হবে। ১৯৯৮১-২০০৩ পর্যন্ত টানা ২২ বছর ধরে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মাদ। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার ভূমিকাকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন মাহাথির। তার দল ইউনাইটেড মালায়াস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) রাজাককে সমর্থন দিলে দল থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন তিনি। পরে নাজিব বিরোধীদের নিয়ে নতুন জোট গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। তার জোটে রয়েছেন কারাবন্দি বিরোধী নেতা আনোয়ার ইবরাহিম।

জেএইচ/পিআর