ধর্ম

খ্রিষ্টান বিচারক অপরাধীদের শুনালেন কুরআন

হজরত ইসা আলাইহিস সালাম ও তার মা হজরত মরিয়মকে নিয়ে অপমানমূলক বক্তব্য দেয়ায় লেবাননের ৩ যুবককে কুরআনের সুরা আল-ইমরানের কয়েকটি আয়াত শুনান দেশটির এক বিচারক। যে আয়াতগুলোতে হজরত ইসা আলাইহিস সালাম ও তার মায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে।

Advertisement

ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবি ও রাসুল। তাকে বিশ্বাস এবং সম্মান করা মুসলমানদের ঈমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কেউ যদি হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে অস্বীকার করে তবে তাঁর ঈমান থাকার কথা নয়। অসম্মানের তো প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা হজরত মরিয়ম ছিলেন সতী-সাধবী আল্লাহর এক প্রিয় বান্দী।

৩ মুসলিম যুবকের দ্বারা তাদেরকে অসম্মানমূলক কথা বলার একটি ঘটনা ঘটেছে লেবাননে। এ ঘটনার বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৩ মুসলিম যুবক। আর সে বিচারের বিচারক ছিলেন খ্রিষ্টান।

তিনি দোষী ৩ মুসলিম যুবকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হজরত মরিয়ম ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে অসম্মান করা ইসলামে গুরুত্বর পাপ। বরং তা ইসলামকে অবিশ্বাসের শামিল।

Advertisement

বিচারক আরো বলেন, ‘আইন (বিচারিক কাজ) একটি স্কুল; তা শুধু কারাগারে প্রেরণে জন্যই নয়।’

খ্রিষ্টান বিচারকের এ উপদেশেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, উভয় ধর্মের চমৎকার বোঝাপড়া উভয় ধর্মের লোকদের পারস্পরিক সম্প্রীতি স্থাপনে এটি একটি দুর্দান্ত উপায়।

বিচারক সুরা আল-ইমরানের ৪২-৫১নং আয়াতগুলো অপরাধীদেরকে শুনানোর জন্য আদেশ দেন। এখানে আয়াতগুলো অনুবাদ তুলে ধরা হলো-

>> তারপর এক সময় ফেরেশতা মরিয়মের কাছে এসে বলল, ‘হে মরিয়ম! আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন এবং সারা বিশ্বের নারী সমাজের মধ্যে তোমাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের সেবার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন।>> হে মারিয়াম! তোমার রবের আদেশে অনুগত হও। তার সামনে সিজদাবনত হও এবং যে সব বান্দা তার সামনে অবনত হয় তুমিও তাদের সঙ্গে অবনত হও।

Advertisement

>> (হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সব অদৃশ্য বিষয়ের খবর, ওহির মাধ্যমে আমি এগুলো তোমাকে জানাচ্ছি। অথচ তুমি তখন সেখানে ছিল না, যখন হাইকেলের সেবায়েতরা মারিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক কে হবে এ কথা ফয়সালার জন্য নিজেদের কলম নিক্ষেপ করেছিল। আর তুমি তখনও সেখানে ছিলে না যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল।

>>যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারিয়াম! আল্লাহ তোমাকে তার একটি ফরমানের সুসংবাদ দান করছেন। তার নাম হবে মসিহ ঈসা ইবনে মারিয়াম। সে দুনিয়া ও পরকালে সম্মানিত হবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

>> দোলনায় থাকাবস্থায় এবং পরিণত বয়সেও মানুষের সঙ্গে কথা বলবে এবং সে হবে সৎ ব্যক্তিদের অন্যতম।

>> এ কথা শুনে মারিয়াম বলল,‘ হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি।’ জবাব এলো, এমনটিই হবে। আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন।’ তিনি যখন কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন শুধু এটুকুই বলেন, হয়ে যাও; তাহলেই তা হয়ে যায়।’

>> (ফেরেশতারা আবারো বলতে লাগল) আর আল্লাহ তাকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন। তাওরাত ও ইনজিলের জ্ঞান দান করবেন।

>> এবং নিজের রাসুল বা দূত হিসেবে বনি ইসরাইলের কাছে পাঠাবেন। (রাসুল হিসেবে এসে বলবেন) আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে আয়াত (নিশানি) নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের সামনে মাটি থেকে পাখির আকৃতি বিশিষ্ট একটি মূর্তি তৈরি করেছি এবং তাতে ফুৎকার দিচ্ছি; আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করি এবং মৃতকে জীবিত করি। আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা নিজের ঘরে কি খাও ও কি মজুদ করো। এর মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ট নিশানি রয়েছে; যদি তোমরা ঈমানদার হও।

>> আমি সেই শিক্ষা ও হেদায়েতের সত্যতা ঘোষণা করার জন্য এসেছি; যা বর্তমানে আমার যুগে তাওরাতে আছে। আর তোমাদের জন্য যে সব জিনিস হারাম ছিল তার কিছুকে হালাল করার জন্য এসেছি। দেখো! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে আমি নিশানি নিয়ে এসেছি। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।

>> আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কাজেই তোমরা তার ইবাদত কর। এটিই সহজ পথ।’

কুরআন থেকে খ্রিষ্টান বিচারকের নসিহত প্রদান নিঃসন্দেহে কুরআনের সত্যতা-মর্যাদা এবং অপরাধ প্রবনতা রোধ করতে সাম্য ও সম্প্রীতির সুস্পষ্ট নির্দশন ফুটে ওঠেছে। কুরআনের বিধানের বাস্তবায়নই অপরাধমুক্ত সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের সুন্দর শ্বাশ্বত বিধানের যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ করার তওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর