অস্ত্রোপচার শেষে বাড়ি ফিরল বিরল রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর মেহেরিন আক্তার স্বর্ণালী (১২)। বুধবার বেলা ২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ছেড়ে যায় সে। গত ২৮ নভেম্বর হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে তার দীর্ঘ অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা নাজনীন বলেন, স্বর্ণালী প্লেক্সিফর্ম নিউরোফাইব্রোমায় আক্রান্ত। মূলত জিনগত জটিলতায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। বিশ্বব্যাপী এমন বিরল রোগের অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ। সফলতার হারও কম। কিন্তু তারা সাধ্যমত চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বর্ণালীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এমন রোগের ক্ষেত্রে দু'বছর বয়সের মধ্যেই অস্ত্রোপচার করতে হয়। কিন্তু স্বর্ণালীর বয়স এখন বারো। অনেক দেরি হয়ে গেছে। এ কারণে টিউমারের চাপে তার পেশিগুলো পাতলা হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার চলাকালে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। ফলে ১০ শতাংশ টিউমার রেখে দিয়েই শেষ করতে হয়েছে।
আপাতত তাকে কিছু ব্যয়ামের পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘদিন তা হাতে প্লাস্টার ছিল। এ জন্য ব্যয়াম জরুরি। এছাড়া অস্ত্রোপচারে কিছু চামড়া হারিয়েছে। এগুলো তাতেই ফিরে আসবে। আগামী দু'সপ্তাহ পর তার আবারও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কথা জানান তিনি।
স্বর্ণালী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের টেগাটাপাড়ার আবদুল মান্নানের মেয়ে। সে পার্শ্ববর্তী নোনামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সকালে হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় স্বর্ণালীর সঙ্গে।
Advertisement
অস্ত্রোপচারের পর খানিকটা সুস্থ অনুভব করছে সে। বাড়ি ফেরার আনন্দে বেশ উচ্ছ্বসিত স্বর্ণালী। তার ভাষায়, বাবা চতুর্থ শ্রেণির নতুন বই নিয়ে রেখেছেন। বাড়ি ফিরেই বইয়ে মলাট দেবে। তারপর যাবে স্কুলে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে, হুল্লোড় করবে।
দুষ্টমিতে জুড়ি মেলা ভার স্বর্ণালীর। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা জানান, সব সময় স্বর্ণালী সবার সঙ্গেই দুষ্টমি করতো। যাবার সময় শেষবারের মতো চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে সে। ওই সময়ও একজন নার্স তাকে ব্যথা দিয়েছে জানিয়ে তার শাস্তি দাবি করে সে। হাসিমুখে তার সেই আবদার রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন চিকিৎসক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গত ৭ নভেম্বর রামেক হাসপাতালে নেয়া হয় স্বর্ণালীকে। প্রথম দিকে হাসপাতালের মেডিসন ইউনিট-২ এ ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয় তার। তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মেয়ের চিকিৎসায় স্বস্তি ফিরেছে স্বর্ণালীর দরিদ্র পরিবারে। তার মা রুমা বেগম এনিয়ে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মেয়ের পুরোপুরি সুস্থতা কামনায় সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
Advertisement
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এমএস