ধর্ম

দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার গুরুত্ব

মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। আর সব সময় সঠিক পথের ওপর অটল ও অবিচল থাকা ইসলামের অনিবার্য দাবি। তা পালন করা মুসলমানদের জন্য সহজ। হোক তা মসজিদে, কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, চাকরিস্থলে, হাট-বাজারে কিংবা ঘরে।

Advertisement

প্রকৃত মুসলমানের সব থেকে বড় কাজ ও সুমহান বৈশিষ্ট্য হলো স্বীয় দ্বীনের (ইসলামের) বিধানের ওপর অটল ও অবিচল থাকা। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়নে যত্নশীল হওয়া। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না থেকে তাঁর আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

সত্য মিথ্যার পার্থক্য নিরূপনে সন্দিহান হওয়া এবং সুসাব্যস্ত সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার পর আবার তা পরিত্যাগ করা ইসলাম ও ঈমানদারের কাজ নয়; বরং তা অবিশ্বাসী ও মুনাফেকি চরিত্রের লোকের কাজ। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, (তাহলে তার হৃদয় ও মন) প্রশান্তি লাভ করে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকাল (দুনিয়া) ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। আর এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।’ (সুরা হজ : আয়াত ১১)

Advertisement

সুতরাং ইসলামের বিধি-বিধান ও প্রিয়নবির সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে অটল ও অবিচল আত্মবিশ্বাস সঙ্গে। আর মুমিনের জীবনের অপরিহার্য বিষয় হলো- দ্বীন তথা সঠিক পথ ও মতকে আঁকড়ে ধরা এবং তার ওপর অটল ও অবিচল থাকা। আর এ জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাও আবশ্যক কর্তব্য।

হরজত সুফিয়ান বিন শাক্বাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ইসলামের ব্যাপারে এমন একটি কথা বলে দিন, যে বিষয়ে আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করব না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

‘বলো আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি; তারপর এর ওপর অবিচল থাক।’ (মুসলিম)

প্রিয়নবির এ নির্দেশের অর্থ হলো->> এমন সোজা ও সরল রাস্তায় চলা; যাতে কোনো বক্রতা বা বিরোধ নেই।>> প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরা।>> আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিকে যথাযথভাবে আঁকাড়ে ধরা।>> উত্তম ব্যবহার ও সুন্দর চরিত্রকে আঁকড়ে ধরা।>> লেন-দেনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করা।>> সর্বোপরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথ অবলম্বন করা।

Advertisement

উল্লেখিত বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালনে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন-

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, আমার নামাজ; আমার আত্মত্যাগ; আমার জীবন ও মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি তা পালনে আদিষ্ট হয়েছি। আর আমিই প্রথম আনুগত্যশীল।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২-১৬৩)

পরিশেষে...দ্বীন তথা ইসলামি জীবন-ব্যবস্থার ওপর অটল-অবিচল থাকা এবং তা যথাযথ পালন করতে পারা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এক বড় নিয়ামত। ইসলামের বিধান পালনের সুফল প্রাপ্তি এবং আল্লাহর পরীক্ষায় দুদুল্যমান হওয়া ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য নয়। প্রিয়নবি ঘোষণায়, ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইসলামি জীবন বিধানের ওপর অবিচল থাকা’ পরকালের মুক্তি লাভের উপায়।

সুতরাং সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায়, হাসি-কান্না, বিপদে-মুসিবতে, আল্লাহর নেয়ামত লাভ এবং পরীক্ষায় সব সময় আল্লাহর দ্বীনের ওপর অটল ও অচিবল থাকা আবশ্যক।

দ্বীনের ওপর অবিচল থাকতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতেন-

‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব; ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা।’হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশ মোতবেক দ্বীনের ওপর অটল এবং অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের ওপর অবিচল ও অটল থাকতে আল্লাহর দরবারে প্রিয়নবির শেখানো দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম