নানা অভিযোগের পরও মাঠপর্যায়ে থাকছে এমপিও কার্যক্রম। ফলে আগের মতো বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিও আবেদন গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি একসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
জানা গেছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এমপিওভুক্তির কাজ মাঠপ্রশাসনে (জেলাভিত্তিক) করা হয়। এরপর থেকেই এমপিওভুক্তির প্রায় প্রতিটি কাজে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
জানা গেছে, এমপিও কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে চালু করার পর নানা অনিয়মের অভিযোগ আসে। এ সব বিষয় আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেনের সভাপত্বিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এমপিও সংক্রান্ত বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়। সভায় এ কার্যক্রম আবারো মাউশিকে দায়িত্বভার দিয়ে আগের পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ আসে। কিন্তু শিক্ষা সচিব তা নাকচ করে এমপিও কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে পাঠপর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দেন। কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা সুষ্ঠু সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন সভার সভাপতি। নানা অভিযোগ থাকলেও এ সিদ্ধান্তের ফলে পাঠপর্যায়েই এমপিও কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, আগে এমপিওভুক্তির বিভিন্ন কাজ ঢাকায় শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) সম্পন্ন হতো। তখন অনেক ক্ষেত্রে এক জায়গায় অর্থ ঢালতে হতো। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস এবং বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়। ফলে এখন সবমিলিয়ে অন্তত চার ঘাটে পয়সা না দিলে ফাইল উপরে ওঠে না।
Advertisement
অথচ সেবা প্রার্থীদের সুবিধা দিতেই এমপিও’র কাজ মাঠপর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। এছাড়া মাউশিতে থাকা এমপিও সংক্রান্ত অবশিষ্ট কাজ এবং সরকারি স্কুলের শিক্ষক বদলিতেও পয়সার খেলা চলে বলে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি জাগো নিউজকে বলেন, তিনি রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ২০১৬ সালের মার্চে ওইপদে এমপিওভুক্তির জন্য তাকেও জেলা শিক্ষা অফিসারকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগের চেয়ে এখন এমপিওভুক্তির কাজে ঘুষ বাণিজ্য কয়েকগুণ বেড়েছে। ঘুষ না দিলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই শিক্ষককে হয়রানি করেন থাকেন। নানা অজুহাতে এমপিও’র ফাইল আটকে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে এমপিও কার্যক্রম বহাল থাকায় অনিয়ম-দুনীতি করার পথ সুগম হয়ে যেতে পারে। তাই সুষ্ঠুভাবে এমপিও কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বৃদ্ধির জোর দাবি জানান।
Advertisement
জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন জাগো নিউজকে বলেন, এমপিও সংক্রান্ত কাজে নানাধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। এ জন্য সারাদেশে টিম পাঠানো হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এমপিও কার্যক্রম সহজীকরণ করতে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়। নানা অভিযোগ থাকলেও পুরোনো পদ্ধতিতে না গিয়ে অনলাইনভিত্তিক রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে মনিটরিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হবে। এ সংক্রান্ত কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ২৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক কর্মচারী সরকারি বেতন পাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দের প্রায় ৬৫ শতাংশই খরচ হয় এ খাতে।
এমএইচএম/একে/এমএস