ধর্ম

সফরকালে রোজার নিয়ম

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে আয়েশা, আল্লাহ তায়ালা কোমল, কোমলতাকে ভালোবাসেন (মেশকাত)। আল্লাহ বান্দার কল্যাণের জন্যই আজকের পৃথিবীতে আমরা যা কিছু দেখি, যা দেখি না শুধু উপলব্দি করি এমনকি যা উপলব্দিও করতে পারি না এমন অনেক বিষয়ও রয়েছে। এর সব কিছু মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। যার প্রমাণ সমস্ত কোরআনুল কারিম। আর এ মাসটি হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এ কোরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ বান্দার ওপর রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন। আবার রোজা না রাখারও বিধান প্রণয়ন করেছেন। সফর অবস্থায় মানুষ কী করবে এ ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের বক্তব্য কী তা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, হামজাহ ইব্ন আমর আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, আমি কি সফরে রোজা রাখবো? তার রোজার অভ্যাস ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি চাও রাখ, অন্যথায় ইফতার করো। (বুখারী, মুসলিম)ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে সফর করে রোজাবস্থায় উসফান নামক স্থানে পৌঁছান। অতপর পানির পাত্র ডেকে পাঠালেন ও দিনে পান করলেন, যেন লোকেরা তাকে দেখে। তিনি ইফতার করে মক্কায় গমন করেন। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে রোজা রেখেছেন ও ইফতার করেছেন। অতএব যার ইচ্ছা রোজা রাখ, যার ইচ্ছা ইফতার করো। (বুখারি ও মুসলিম)হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রমজানে যুদ্ধ করতাম, আমাদের থেকে কেউ হতো রোজাদার, কেউ হতো রোজাভঙ্গকারী। রোজাদার রোজাভঙ্গকারীদের, আবার রোজাভঙ্গকারী রোজাদারকে তিরস্কার করতেন না। তারা মনে করতেন, যার শক্তি আছে সে রোজা রাখবে, এটার তার জন্য ভালো, আর যে দুর্বল সে রোজা ভাঙবে, এটার তার জন্য ভালো। (মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)।হযরত আবু সাঈদ খুদরি থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রোজাবস্থায় মক্কার দিকে সফর করছি, আমরা একস্থানে অবতরণ করলাম, অতপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের শত্রুদের নিকটবর্তী হয়েছে, পানাহার তোমাদের শক্তির জন্য সহায়ক। এটা ছিল রুখসাত। আমাদের কেউ রোজা রাখলেন, কেউ ভেঙ্গে ফেললেন। অতপর আমরা অপর স্থানে অবতরণ করলাম, তিনি বললেন, সকালে তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হবে, ইফতার তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে। এটা চূড়ান্ত নির্দেশ ছিল। আরা সকলে ইফতার করলাম। অতপর তিনি বলেন, তারপর আমরা নিজেদের দেখেছি, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সফরে রোজা রাখতাম। (মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)সুতরাং বুজা গেল-ক. ইসলামের উদারতা, ইসলামি শরীয়তের ছাড় ও তার অনুসারীদের ওপর সজাগ দৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায় উল্লেখিত হাদিসের বর্ণনায়।খ. মুসাফির রোজা রাখা ও ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে ইচ্ছাধীন, যা সহজ তার পক্ষে তাই সুন্নত। যার পক্ষে সফরে রোজা কষ্টকর নয়, তার পক্ষে সফরে রোজা রাখা উত্তম।গ. লাগাতার যে সফর করে, অথবা অধিকাংশ সময় সফরে থাকে, চাকরি বা পেশাদারী কাজের জন্য সফর করতে হয়, তার পক্ষে সফরে রোজা রাখা উত্তম, যদি কষ্ট না হয়। আর যদি সফরে ভঙ্গ করা রোজা কাযার সময় না মিলে, যেমন যাদের সারা বছর সফরে অতিবাহিত হয়, তাদের পক্ষে সফরে রোজা রাখা ওয়াজিব।ঘ. সফরে রোজা রাখা ও ইফতার করা উভয়ই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে প্রমাণিত। মুসলিমদের উচিত এ ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করা।ঙ. রমজান মাসে সফর করা বৈধ, কারণ ফাতহে মক্কার বছর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে সফর করেছেন।চ. আগামীকাল সফরের নিয়ত থাকলে, সে রাত থেকে ইফতারের নিয়ত করবে না, কারণ নিয়ত দ্বারা মুসাফির হয় না, যতক্ষণ না সে সফর আরম্ভ করে।ছ. সফরের নিয়তকারী ব্যক্তি মুকিম অবস্থায় (সফর শুরু না করা পর্যন্ত) ইফতার করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না সে সফর আরম্ভ করে, বা যানবাহনের চড়ে।সুতরাং আল্লাহ আমাদের উল্লিখিত বিষয়াদির আলোকে সঠিক জীবন-যাপন করার মাধ্যমে রমজানের রহমত-বরকত লাভ করে সঠিক পদ্ধতিতে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন আমিন।তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, মসুলিম, জামে আত তিরমিজি, সুনানে নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কোরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।বিএ/আরআইপি

Advertisement