আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে কী কী প্রস্তাব দেয়া হবে তা নিয়েই সবার সঙ্গে আলোচনা করব। গণতন্ত্রের ভিত্তি কিভাবে মজবুত করা যায়, সে জন্যই সবাইকে ডাকা। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে।
Advertisement
শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নিঃশঙ্কভাবে। এই ব্যবস্থা যদি করতে পারি তাহলে স্বাভাবিকভাবে সকলের একটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেটাই আমি চাই। আগামীতে নির্বাচন হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয় আলোচনা করে তার একটা পথ বের করব। আমরা চাই মানুষ মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। নির্বাচনের মাধ্যমে যার যার প্রতিনিধি সে সে বেছে নেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ভোটের অধিকার যাতে প্রয়াগ করতে পারে সেই চেষ্টা করি। ২০০১ এর নির্বাচনের কথা যদি স্মরণ করেন। ভোটের দিন আমি যেখানে ইলেকশন করেছিলাম সেখনে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে গাড়িতে করে নিয়ে দেখানো হয়েছিল পরিণতি কেমন হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করি। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে আমি সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি। খালেদা জিয়াকে ফোন করেছি, নিজে ফোন করি। ধরার পরে যে ঝাড়িটাড়ি মারলো, তা বলতে চাই না। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। আমি বলেছিলাম সর্বদলীয় সরকার করব, আপনি (খালেদা জিয়া) যে মন্ত্রণালয় চান তা দিতে রাজি আছি। কিন্তু নির্বাচনে আসলো না। নির্বাচনে না এসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা শুরু করলো। তবে জনগণ তাদের রুখে দিল আর এ জন্য নির্বাচনটা হলো, আমরা আবার ক্ষমতায় এলাম।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থানে আছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের প্রস্তাবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ছবিসহ ভোটার তালিকা এসেছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম পৃথিবীর সভ্য অনেক দেশে রয়েছে। সেখানে একজন একটা ভোটই দিতে পারবে। কাজেই সেই ব্যবস্থাও যাতে হয় সেই প্রস্তাবও আমরা দিয়েছিলাম। কিছু কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন এই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভোট হয়েছে। সেই সিস্টেমও যদি আসে আমরা তা চাই।
সম্প্রতি বিচার বিভাগের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতিদের নিয়ে এ ধরনের খেলা অতীতে আরও হয়েছে। এমনও হয়েছে প্রধান বিচারপতির এজলাসে তাকে পত্রপাঠ বিদায় জানানো হয়েছে, অথচ তিনি জানেনই না। হুটহাট করে বিচারপতিদের বিদায় জানানো হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদও প্রধান বিচারপতিকে বঙ্গভবনে চা খাওয়ার দাওয়াতে ডেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।
Advertisement
বিএনপির শাসনামলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম চিফ জাস্টিসের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ বাড়িয়ে দেওয়া হলো। যিনি কেবলমাত্র অবসপ্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি উপদেষ্টা হবেন তাই আন্তর্জাতিক সম্পাদক কে এম হাসানকে উপদেষ্টা বানালো এবং চক্রান্ত করলো যাতে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়ে ভোট চুরির সুযোগ করে দেয়। আমরা মহাজোট করি। ভুয়া ভোটার আইডি তৈরি করলো, আমরা আন্দোলন করি। এসব কারণে আবার ইমারজেন্সি ঘোষণা করা হয়। এরপর দ্রুত ইলেকশন হবে ভেবেছিল, কিন্তু তখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে যত নিয়োগ দিয়েছিলাম একইদিনে পত্রপাঠ বিদায় করা হয়। প্রশাসনে একই অবস্থা। কোনো নিয়ন্ত্রণ বা ডিসিপ্লিন কিছু ছিল না। জাতীয় সংসদে ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে নিজের মন মতো লোক বসিয়ে দেয়া হয়। স্বাধীনতার বিরোধীদের মন্ত্রী করে সংসদে বসানো হয়। কর্নেল রশিদ হুদাকেও বসানো হয়। আমাদের লাখো শহীদের অর্জনের পতাকা তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে।
এফএইচএস/আরএস