ধর্ম

আত্মীয়তার সম্পর্কের ধরন ও তা রক্ষার গুরুত্ব

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও আমল। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনে সর্বোত্তম আমলগুলোর মধ্যে এটিও একটি। কুরআন এবং হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ও ছিন্ন করার ব্যাপারে অনেক সতকর্তা ও সুসংবাদ রয়েছে।

Advertisement

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস রাখা; তারপর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।’

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মাখলুককে সৃষ্টি করেন। মাখলুক সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করার পর আত্মীয়তার সম্পর্ক বলল, এ হল (আল্লাহর কাছে) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান।

তিনি বললেন, ‘তুমি কি খুশি হবে না, আমি (তার সঙ্গে) সম্পর্ক রাখি; যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এবং আমি (তার সঙ্গে) সম্পর্ক কর্তন করি; যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

Advertisement

সে (আত্মীয়তার সম্পর্ক)বলল, ‘হ্যাঁ’ হে রব!। তিনি বললেন, তোমাকে তা দেয়া হল।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সুরা মুহাম্মদ-এর ২২ ও ২৩নং আয়াত তুলে ধরে) বলেন, ‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব লাভ কর; তবে তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই (ওই সব লোক) যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা লানত (অভিশাপ) করেন। অতঃপর তাদেরকে বধির করেন এবং দৃষ্টি শক্তিহীন (অন্ধ) করে দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূল কথা হলো-‘পরস্পরের সঙ্গে মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা।’

আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেহেরবাণী ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন, রাহেম বা আত্মীয়তার সর্ম্পক দুই ধরনের হয়-

>> সাধারণ সম্পর্কএ সম্পর্কটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যাকে বলা হয় দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সঙ্গে ঈমানি বন্ধনের কারণে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। ঈমানদারদের সঙ্গে ভালবাসা রাখা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করা।

Advertisement

তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করা।

যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।

>> বিশেষ সম্পর্কমাতা-পিতা উভয় দিক থেকে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করা। তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

যেমন- পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা।

আর যখন অনেক আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়; তখন নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে। পর্যায়ক্রমে তারপর যেটি তুলনামূলক কাছের সেটি অগ্রাধিকার পাবে।

নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ধরনআল্লাম ইবনু আবি জামরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন->> আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল ও ধন-সম্পদ দ্বারা হয়;>> প্রয়োজনের সময় সাহায্য করার দ্বারা হয়;>> ক্ষতিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে হয়;>> পরস্পরের সঙ্গে হাসি-খুশি ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়;>> দোয়া করার দ্বারাও হয়;>> সাধ্যানুযায়ী কারো কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারাও হয়;>> সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচানোর দ্বারাও হয় এবং তাদের উপকার করার দ্বারাও হয়।

সর্বোপরি-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা তখন আবশ্যক হয়ে যায়, যখন আত্মীয়-স্বজন ঈমানদার হয়ে থাকে। আর যদি আত্মীয়-স্বজন ঈমানদার না হয়ে ইসলামের শত্রু কাফের অবিশ্বাসী হয়ে থাকে তখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের একমাত্র উপায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম