কৃষি ও প্রকৃতি

পুকুরে পাঙ্গাসের সমন্বিত চাষ

আমাদের দেশের পুকুর, জলাশয় পাঙ্গাস মাছ চাষের ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে মাছ করতে থাই পাঙ্গাসের সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ লাভজনকভাবে চাষ করা যায়। পাঙ্গাস মাছের সাথে তেলাপিয়া, কৈ, গলদা চিংড়ি, শিং, মাগুর প্রভৃতি মাছ চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই পুকুরে পাঙ্গাসের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি-

Advertisement

স্থানপাঙ্গাস মাছ পুকুরে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যে সব জলাশয় বা পুকুরে ৫-৬ মাস পানি থাকে সেখানে এ মাছ সহজেই চাষ করা যায়। তবে যে সব জলাশয় সহজে শুকানো যায়, প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, উৎপাদিত মাছ ও খাদ্য উপকরণ সহজে পুকুর পাড়ে পরিবহন করার মতো ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পুকুরে পড়ে এরূপ পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

সমন্বয়বাংলাদেশে সুষম দানাদার খাবার প্রয়োগ করে ১ বছরে পাঙ্গাসের সঙ্গে তেলাপিয়া, কৈ, গলদা চিংড়ি, শিং ও মাগুর প্রভৃতি মাছ চাষ করে একর প্রতি ৮-১০ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

আরও পড়ুন- যেভাবে দেশি মাগুরের চাষ করবেন

Advertisement

পুকুরপাঙ্গাস চাষের পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর চুন দিতে হবে শতকে এক কেজি হারে। পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থেকে যায়, তবে চুন কাদার সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চুন দেওয়ার ৪-৫ দিন পর পানি দিতে হবে।

পোনাপোনা মজুদের জন্য পরিচিত মৎস্য খামার থেকে ভালোমানের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া এবং শিং মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাথে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়তে হবে। চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোমানের উপযুক্ত আকারের পোনার ওপর। একর প্রতি পুকুরে একসঙ্গে পাঙ্গাসের পোনা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার, তেলাপিয়ার পোনা ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার, রুইয়ের পোনা ১শ’ থেকে ২শ’, মৃগেলের পোনা ১শ’-২শ’, শিং মাছের পোনা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার চাষ করা যায়।

খাদ্যমাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পোল্টি ফিডের খাবার পরিমাণমতো দিতে হবে। যে পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা হয়; সে পুকুরের মাছ বেশি খাদ্য খায়। এক্ষেত্রে খাদ্য বেশি দিতে হবে।

আরও পড়ুন- জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী

Advertisement

পরিচর্যাপানির পরিবেশ ভালো রাখার জন্য অবস্থা বুঝে পানি আংশিক পরিবর্তন করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন ও খাদ্য লবণ একত্রে দিতে হবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। অক্সিজেনের অভাব হলে পুকুরে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পানি বেশি সবুজ হলে পুকুরে খাদ্য কম দিতে হবে। পুকুরে বেশি ঘনত্বে মাছ থাকলে খাবার দিলে মাছ পানির উপরের স্তরে চলে আসে, বিধায় শিকারী পাখি মাছ ধরে নিতে পারে। সেজন্য পুকুরের ওপর নেট দেওয়া যেতে পারে।

বিক্রিচাষের ৭-৮ মাস পর পাঙ্গাস মাছ গড়ে প্রায় ১০০০-১১০০ গ্রাম ওজনের হয়। এ সময় পাঙ্গাস মাছসহ অন্যান্য মাছ বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়।

এসইউ/এমএস