নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনার বিষয়ে আপিলের শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণেই বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এ কথা সরকারকে জানাবেন। সমাধান করবেন।’
Advertisement
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বিষয়ে আপিলের শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার এ শুনানি গ্রহণ করেন।
শুনানি শেষে মামলার কার্যক্রম আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। একই সঙ্গে ‘মোবাইল কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়’ স্থগিত করা হয়।
Advertisement
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
শুরুতে আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘চারদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধ ছিল। এ সময়ের মধ্যে দিনাজপুরে ৩৭টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনি কী প্যারালাল আদালত চান? ’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না। কোনো অপরাধ দমনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার জন্য এটা বলা।’
আদালত বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে শাস্তি দিবেন। এরপর আবার তার বিচার করবেন। এটা কোন বিধানে করবেন? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একজন দোষ স্বীকার করলেই তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।’
Advertisement
তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা বাড়াবাড়ি করেছেন। আমরা প্রকাশ্য আদালতে একটি কথা বলি। কিন্তু এর অপব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগ সরকারের বিপক্ষে নয়। বিচার বিভাগ সবসময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে।’
এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এভাবে বলে কী সেটা হবে? আপনি বলার পর সংবাদপত্রে বড়বড় করে ছাপা হয়। হেডলাইন হয়। এতে তো কোনো সমাধান হচ্ছে না।’
এ পর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য জানতে চান। জবাবে রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এস আজিম বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধভাবে আমাকে (রিট আবেদনকারী) একমাসের সাজা দিয়েছে। আমি ১০ দিন কারাগারে ছিলাম।’
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দোষ স্বীকার করলেই কেবল তাৎক্ষণিক সাজা দেয়া হয়। ’
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দোষ স্বীকারের একটি বিধান আছে। ম্যাজিস্ট্রেট লিখলেই হয়ে গেলো?’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সামনে রমজান মাস।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যা চাচ্ছেন তা হবে। আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু প্রশ্ন হলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নাকি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পরিচালিত হবে। আপনারা বাড়িবাড়ি করবেন না।’
‘আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সিডিউল বাড়াতে বাড়াতে এক মাইল নিয়ে গেছেন। বাকি রইলো ৩০২ ধারা,’ বলেন প্রধান বিচারপতি।
সরকারকে সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ২ জুলাই ধার্য করে আদালত বলেন, ‘আশা করি আইন কমিশনের সহযোগিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আইন করবেন। সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আমাদের আইন কমিশন আছে। সেখানে একজন নাম করা প্রফেসর আছেন। তার লেখা ভালো অনেক বই আছে। অথচ আপনারা তাদের পরামর্শ নেন না। মন্ত্রণালয় থেকে কেউ একজন লিখে দিল আর আইন হয়ে গেল? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনবিদ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আইন করা উচিৎ। সবাই মিলে আইন করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসে আইন ঠিক করা হচ্ছে। এটা দেখে মর্মাহত হলাম। এটাই যদি হয় তাহলে আইন কমিশনের দরকার কি?’
ভারতের আইন কমিশনের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেখানে আইন কমিশন মাঠ পর্যায়ে কথা বলে। বাল্যবিয়ে নিয়ে সমস্যাসহ সব সামাজিক সমস্যা নিয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে কথা বলার পরই আইন করে। আপনারাও সে রকমভাবে আইন করেন। দেখবেন অনেক সমস্যা কমে গেছে।’
এফএইচ/এমএমএ/জেআইএম