বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগের স্বপক্ষে আরও প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে বহুজাতিক সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিবিষয়ক অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি।
Advertisement
গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের জড়িত থাকার অধিকতর প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) দাবি করে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ওই অর্থ চুরির ঘটনায় পিয়ংইয়ংয়ের হ্যাকাররা জড়িত ছিলেন। চীনের মধ্যস্বত্বভোগীদের সহায়তায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ওই বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাট করে বলে তদন্তে জেনেছেন এফবিআই কর্মকর্তারা।
রাশিয়াভিত্তিত সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির ৫৮ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে ল্যাজারাসের (হ্যাকিং করে অর্থ চুরিকারী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক গ্রুপ) যোগসাজশ তুলে ধরা হয়েছে।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, ল্যাজারাসের হ্যাকাররা শুরুতেই উত্তর কোরিয়ার একটি আইপি অ্যাড্রেস থেকে ইউরোপের একটি সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করে। যে সার্ভার ল্যাজারাসের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ক্যাসপারস্কির গবেষক ভিটালি কামলুক এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেছেন, শুরুতেই তারা উত্তর কোরিয়া ও ল্যাজারাসের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টির প্রমাণ পান। ২০০৯ সাল থেকেই এই হ্যাকিং গ্রুপটি সক্রিয় রয়েছে বলে তাদের কাছে প্রমাণাদিও রয়েছে।
তিনি বলেন, এর পেছনে পিয়ংইয়ংয়ের হাত রয়েছে তা তিনি বলছেন না। তবে এই সাইবার হামলার সঙ্গে জড়িতরা উত্তর কোরিয়া থেকে আসা বা উত্তর কোরিয়ার কেউ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এটা করেছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা ল্যাজারাসের একটি গ্রুপের কাজ। এই হ্যাকিং গ্রুপের টার্গেটে রয়েছে বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্যাসিনো এবং ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও মহাকাশ নিয়ে কাজ বিএই সিস্টেমসের হুমকি ও বুদ্ধিমত্তা বিভাগের প্রধান আদ্রিয়ান নিস বলেন, ক্যাসপারস্কির পাওয়া তথ্যগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে তারা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে ল্যাজারাসের সম্পর্ক নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের কিছু অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন হ্যাকাররা।
এ নিয়ে দীর্ঘ তদন্তের পর ম্যানিলার ব্লু রিবন কমিটি জানায়, ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিটের শাখা থেকে ওই ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যাংকটির চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে এই অর্থ ক্যাসিনোতে ব্যবহার করা হয়।
ল্যাজারাসের আগে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হলিউডে সনির স্টুডিওতে সাইবার হামলা করে। ওই ঘটনাতেও উত্তর কোরিয়ার হাত ছিল বলে সে সময় অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এসআর/জেডএ/জেআইএম