ধর্ম

মাদকমুক্ত জীবনই সবার কাম্য

মানুষের জীবন একটাই আবার মৃত্যুও সুনিশ্চিত। তাই মৃত্যুর আগে মাদকমুক্ত জীবন গড়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনই সবার কাম্য। আর দুনিয়ার সভ্য ও সুশীল সমাজ আজ এ কথা বলতে দ্বিধা করছে না যে, মাদককে এড়িয়ে চলুন; বরং তারা সভা-সমাবেশ ও র্যা লিসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Advertisement

মাদক এক ভয়াবহ ব্যাধি। এমন কোনো অপকর্ম নেই যে, যারা মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত, তারা তা করতে পারে না। মাদকাসক্ত ব্যক্তি কখনো পেটের ক্ষুধা নিয়ে ভাবে না বরং মাদক গ্রহণ করতে পারলো কিনা সেটিই হয়ে ওঠে তাদের নিকট মূল বিষয়।

যে কারণে মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা মাদকের টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই, নারী নির্যাতনসহ নানা রকম সামাজিক অপরাধে নিয়োজিত হতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। । এমনকি মাদকের টাকার জন্য কাউকে খুন করতেও তাদের হাত কাঁপে না।

তাদের উদ্দেশ্য একটাই যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের মাদক পেতেই হবে। মাদক সেবন করতেই হবে। আর এভাবেই মাদকের প্রভাবে বেড়ে চলেছে সামাজিক বিশৃঙ্ক্ষলাসহ নানাবিধ জটিল এবং কঠিন মরণ ব্যাধির প্রকোপ।

Advertisement

মাদকের কুপ্রভাবের কথা বিবেচনায় আল্লাহ তাআলা মাদক গ্রহণে সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে? (সুরা মায়েদা ৯০-৯১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ প্রদান বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হইও না।’

মাদক মুক্ত থাকার উপায়...মাদকের মতো সামাজিক, মানসিক নানাবিধ সমস্যা, জটিল ও কঠিন মরণ ব্যাধি থেকে আত্মরক্ষায় কুরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং সুশীল সমাজ ও জনসচেতনতামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবিরাম প্রচেষ্টা রয়েছে।

কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা ও সমাজিক সভা-সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, পারিবারিক প্রচেষ্টা, ধর্মীয় অনুশাসনই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের ইতিবাচক উপায়।

Advertisement

আবার পরিবারে পিতা-মাতা ও কর্তা ব্যক্তিরা তাদের সন্তানকে ধর্মীয় অনুশাসনে বড় করার পাশাপাশি অন্যায় ও নিষিদ্ধ জিনিসের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাঁদেরকে অবহিত করাও আবশ্যক। এক্ষেত্রে বাবা-মার সচেতনার কোনো বিকল্প নেই।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে-এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যাদের বাবা মাদকের সঙ্গে জড়িত এমনকি মাও জড়িত। এ সব বাবা-মা আবার তাদের সন্তানকে দিয়ে মাদকের ব্যবহার ও ব্যবসায় অন্তর্ভূক্ত করে। আবার অনেক সন্তান তার মা-বাবা মাদকের সংশ্লিষ্টতা দেখে ধীরে ধীরে মাদক গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়।

বিশেষ করে-মাদকের সহজলভ্যতা, মাদকের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ ব্যবহার না থাকা, রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে দিন দিন মাদকের ব্যবহার ও এ সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েই চলছে। যার ভয়াবহ পরিণতির স্বীকার হচ্ছে দেশের তরুণ সমাজ।

সুতরাং প্রতি বছর শুধুমাত্র মাদক দিবসে মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে জনসচেতনা বৃদ্ধি ব্যর্থ চেষ্টা না করে নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমে মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা প্রচার ও বাস্তবায়নে সরকারিভাবে কাজ করার পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজের যথাযথ দায়িত্ব পালন করাও জরুরি।

দেশব্যাপী সব মসজিদের ইমাম ও খতিবদের মাধ্যমে কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরা, উন্মুক্ত জায়গায় ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিকদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।

যেহেতু মাদকমুক্ত সমাজই আমাদের সবার কাম্য। তাই আসুন, মাদকমুক্ত জীবন গড়ি। মাদক ও নেশা পরিহার করে সামাজিক সব অবক্ষয় ও নানাবিদ মরণব্যাধি থেকে দেশ ও জাতির আত্মরক্ষায় দেশের প্রতিটি মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক সঙ্গে মাদকের ভয়াবহতা ও কুফল সমাজের সর্বত্র তুলে ধরি। মাদকমুক্ত সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ গড়ি।

এমএমএস/এমএস