বিশেষ প্রতিবেদন

পানির কল চাইলে চেয়ারম্যান বলে ‘সরকার দেয় না’

বিচ্ছিন্ন চরের বাসিন্দারা এখনো নদী কিংবা পুকুরের পানি সেবন করছেন। ফলে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। সুপেয় পানি সংগ্রহে এসব পরিবারকে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটতে হচ্ছে।

Advertisement

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর ১৫ নং চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ১৯ হাজার। আর তাদের সুপেয় পানি সংস্থাপনের জন্য মাত্র ৪০টি গভীর নলকূপ থাকলেও তার অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

ফলে এই ইউনিয়নের মানুষ এখন বাধ্য হয়ে পুকুর, ডেবা কিংবা খালের ঘোলা পানি পান করছেন। তবে কোনো কোনো পরিবার দূরদুরন্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। গভীর নলকূপের পানি আনতে চরের নারী ও শিশুদের দিনের বড়ো একটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। খাবার পানি সংগ্রহে যেতে হচ্ছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর অডেল গ্রামের বৃদ্ধ সিরাজ ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ বছর আগে এই কল (গভীর নলকূপ) বসানো হয়েছে। কল বসানোর পর থেকে আমরা পানি খাইতাম। কিন্তু গত ৫ বছর ধরে এই কলের পানি আমরা খাইতে পারি না। পানিতে খালি লবণ। গ্রামের ১৮ পরিবার এই কলের পানি খাইতো। লবণের কারণে এখন আর কেউ এই কলের পানি খায় না।

Advertisement

এর কিছু দূর পথ অতিক্রমের পরে দেখা মিলল চন্দ্রদ্বীপের দিয়ারা কচুয়া গ্রামের। সেখানে পানি নিয়ে যাওয়ারর পথে কথা হয় গৃহবধূ নুরু নাহার বেগমের সঙ্গে।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমগো গ্রামে একটা টিউবয়েল ছিল। ওটা নষ্ট হয়ে গেছে। এহন আমরা পুকুরের পানি খাচ্ছি। আমাগো মতো গ্রামের আরও অনেক পরিবার পুকুরের পানি খাচ্ছে।

এ বিষয়য়টি সংশ্লিষ্ট কাউকে জানিয়েছেন কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে গৃহবধূ নুরু নাহার বেগম বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান (আলকাছ) সাহেবের কাছে বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। গ্রামের প্রায় অনেকেই চেয়ারম্যানের কাছে গেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চেয়ারম্যান বলেছেন, সরকার নাকি দেয় না। তাই নিরুপায় হয়ে আমরা সবাই পুকুরের পানি খাচ্ছি। এতে রোগ হলে কী আর করার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ নং চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাছ মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, শুধু চন্দ্রদ্বীপেই নয়, পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন অনেক চরেরই এমন অবস্থা রয়েছে। এ অবস্থায় চরের মানুষ অনিরাপদ পানি পান করে। অনেকে পুকুরের পানি পান করার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সুপেয় পানির সংস্থানে সরকারের বিশেষ প্রকল্প প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

Advertisement

পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের চলমান প্রকল্পসহ চরের উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় চরবাসীর পানির সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এই অঞ্চলের মানুষের দাবি, চরের মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণসহ তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও সুপেয় পানির সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দূর করার জন্য সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তবে সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে দাবি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের।

পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া চরের এসব জনগোষ্ঠীর মানুষদের সুপেয় পানি সংস্থাপনে সরকারের বিশেষ প্রকল্প প্রণয়নের দাবি চরবাসীর।

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এএম/বিএ