আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এখনো শুরু না হলেও উভয় মেয়র প্রার্থী বসে নেই। দলের সিনিয়র নেতাদের নিকট ছুটে গেছেন তারা। দুই দলেই কোন্দল থাকায় মান-অভিমান ভাঙাতে উভয় মেয়র প্রার্থীই ছিলেন তৎপর। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুসিকের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর নিকট পরাজিত হন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান। দলীয় কোন্দলের কারণেই আফজল খান পরাজিত হয়েছেন বলে আফজল কন্যা সীমা দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট এমনটাই দাবি করেন। তাই এবার আগে থেকেই আটঘাট বেধে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকাকে বিজয়ী করতে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলেও দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাই গণভবনে বৈঠক করে বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।দলীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগে আফজ খান ও হাজী বাহারের রাজনৈতিক বিরোধ পুরনো। উভয় একই দলের, তবুও যেন বিপরীত মেরুতে অবস্থান। কখনও দেখা হলেও কথা হয় না। নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে নগরীতে অবস্থান। হাজী আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহার সদর আসনের সংসদ সদস্য। এদিকে, এ বছর অ্যাড. আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা এ বছর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু বাবার সঙ্গে হাজী বাহারের রাজনৈতিক দূরত্ব, মান-অভিমান যা-ই থাকুক সোমবার রাতে সীমা মিষ্টি নিয়ে হাজির হন হাজী বাহারের নগরীর মুন্সেফবাড়িস্থ বাসায়। সেখানে হাজী বাহারকে না পেয়ে সীমা টাউন হলের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে এসে হাজী বাহারের নিকট সহযোগিতা ও দোয়া চান। অন্যদিকে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও প্রস্তাবিত মহানগর আওয়ামী লীগে বিরাজ কোন্দল মিটিয়ে দলীয় প্রার্থী সীমাকে বিজয়ী করতে শিগগিরই গণভবনে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহা উদ্দিন বাহার, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ দলের জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি সভা করতে যাচ্ছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বিকেলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সভার দিন-তারিখ জানা যায়নি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রাথী আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর ভরসা রেখেই হয়তো আমাকে নৌকা উপহার দিয়েছেন, আমি বিজয়ী হয়ে নেত্রী ও দলের সম্মান রাখতে চাই। দলে কার সঙ্গে কার বিরোধ ছিল-আছে তা আমি জানতে চাই না, নেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আমি সবার নিকট ছুটে যাছি, বার বার যাবো। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বিরোধ থাকতে পারে, নৌকার সঙ্গে তো কারও বিরোধ নেই, তাই আমার বিশ্বাস দলের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার জন্য মাঠে কাজ করলে ইনশাল্লাহ ৩০ মার্চ নৌকারই বিজয়ই হবে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ন্যায় বিএনপিতে রয়েছে সাক্কু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিনের মাঝে চরম বৈরিভাব ও গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব। এ দুই নেতা একসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আর বিরোধ নেই বলে নেত্রীকে আশ্বস্ত করে সাক্কুর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। তবে পুরনো বিরোধ মিটিয়ে সাক্কুর জন্য হাজী ইয়াসিন পন্থীরা মাঠে কতটুকু কাজ করে এটাই দেখার বিষয়। দুপুরে ইয়াছিন গ্রুপের প্রধান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর বাসায় যান দলের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। বেশ কিছু সময় তিনি সেখানে অবস্থান করে তাকে সহযোগিতা করার জন্য রাবেয়া চৌধুরীর প্রতি অনুরোধ জানান সাক্কু। এসময় রাবেয়া চৌধুরী দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন এবং মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু জানান, আমাদের মধ্যে আগে কিছুটা রাজনৈতিক দূরত্ব ছিল, এখন নেত্রীর নির্দেশে সব মীমাংসা হয়ে গেছে, দলের স্বার্থে আমরা এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে কাজ করবো। কামাল উদ্দিন/এআরএ/জেআইএম
Advertisement