ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা আসলেই কষ্টকর। ঈমানদারদের জন্য এ পৃথিবী সত্যিই পরীক্ষাগার। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেন যে, পৃথিবীতে মানুষের আগমন গাফলতের জন্য নয়; আর বেহেশতও কুড়িয়ে পাওয়া সস্তা কোনো জিনিস নয় যে, চাইলেই পাওয়া যাবে।দুনিয়া যেহেতু একটি রাজপথ। এখানে মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবন-যাপনের জন্যই আগমন। আনন্দ-উল্লাস করার জন্য নয়। সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে পরকালের স্থায়ী জীবনে জান্নাত লাভ পরিশ্রম ছাড়া যেমন সম্ভব নয়; তেমনি দুনিয়াতেও সুখ-শান্তি ও আল্লাহর সাহায্য ঈমানের কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে লাভ হবে।আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে কুরআনুল কারিমে তুলে ধরা হয়েছে-আয়াতের অনুবাদ-আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণসুরা বাকারার ২১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীন ও ইসলামের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের অনুপ্রেরণা দান করেছেন। পরিশ্রম ছাড়া যেমন জান্নাত লাভ সম্ভব নয়; তেমনি আল্লাহর সাহায্যও আসবে না।এ আয়াতে কারিমা নাজিলের বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাম সানাউল্লাহ পানিপথি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ‘যখন মুসলমানগণ আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছেন। তখন তাঁরা ছিলেন নিঃস্ব, হৃতসর্বস্ব। কেননা তাঁরা ইসলাম গ্রহণের কারণে অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত অবস্থায় মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।তাঁদের সব সম্পদ কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তাঁরা জীবনের সব সম্পদ ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমানকে একমাত্র সম্বল হিসেবে গ্রহণ করে অত্যন্ত মজলুম অবস্থায় মদিনায় উপস্থিত হয়েছিলেন।মুসলমানদের সে দিনগুলো ছিল অত্যন্ত কঠিন। খাদ্য-দ্রব্য, বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছেদ মানুষের এ তিনটি মৌলিক প্রয়োজনের প্রত্যেকটিরই অভাব ছিল। তাই আলোচ্য আয়াতে তাদের ঈমানের বৃদ্ধি ও ইসলামের প্রতি অনুরক্ত করে তুলতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-তোমরা কি ভেবে রেখেছ, চির শান্তির প্রাণকেন্দ্র জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ তোমরা কোনো কষ্ট সহ্য করবে না? ইতিপূর্বে যারা ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল; তারা যেভাবে অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত হয়েছিল; তোমাদের কি তেমন কোনো অত্যাচার-উৎপীড়ন সহ্য করতে হবে না?প্রকৃত অবস্থা এই যে-তোমাদের পূর্বে যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান এনেছিল, তারা চরম কষ্ট ভোগ করেছিল, অভাব-অনটন, রোগ-তাপ, জুলুম-নির্যাতন সবই তাদেরকে সহ্য করতে হয়েছিল। এমনকি তারা সে কষ্টের কারণে ব্যাকুল হয়ে বলেছিল- ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে’?তাইতো আল্লামা ইবনে কাছির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘আয়াতের মর্মার্থ হলো- কোনো দুঃখ-কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়ে বেহেশতের আশা করা ঠিক নয়। আগের নবি-রাসুলদের উম্মতেরও পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল; তারাও অনেক বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিল।’পড়ুন- সুরা বাকারার ২১৩ নং আয়াতপরিষেশে...আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শত নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্যেও দ্বীন-ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব বিপদাপদের মোকাবিলায় ইসলামের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement