একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে এখন থেকেই জরিপ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৩০০ আসনের প্রতিটিতে চারজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দলের তিনটি টিম এ জরিপ কাজ করছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি নির্বাচনের আগে একাধিক নিজস্ব দলীয় টিম নির্বাচনী এলাকায় জরিপের কাজ পরিচালনা করে। এজন্য একটি দলীয় গবেষণা সেলও রয়েছে। দলীয় নিজস্ব মূল্যায়ন টিম নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার, বিরোধী দলের প্রতি সমর্থনের ভিত্তি ও প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার মাত্রা বিশ্লেষণ করে দলের হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরে। কেবল নিজ দলের প্রার্থীদেরই নয়, প্রতিপক্ষের প্রার্থীর অবস্থানও জরিপে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়।সূত্র জানায়, নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা, এলাকামুখী, জনবিচ্ছিন্নতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এই জরিপ করা হচ্ছে। জরিপের প্রতিবেদন কেবল দলীয় হাইকমান্ডের কাছেই পেশ করা হয়। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয় মূল্যায়নের প্রতিবেদন মিলিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রার্থীদের জরিপের কাজ শেষ করে রাখতে চায় দলটি। এর আগে গত ২৬ জুলাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। এরপর থেকেই এ জরিপের কাজ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেছেন, সরকারের মেয়াদের আড়াই বছর চলে গেছে। আর ২ বছর ৩ মাস পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য এখন থেকেই সবাইকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি আগাম নির্বাচনের দাবি করলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে, তা শেষ করতে হবে। এছাড়া যেসব উন্নয়ন কাজ করেছি, সে বিষয়ে জনগণের কাছে প্রচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক বাধা-প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দেশজুড়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হওয়ায় কাঙ্খিত সফলতা পেয়েছে সরকার। জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা দমন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিগত সময়ের চেয়ে জনমত এখন আবার সরকারের দিকে। এজন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও সরকারের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী থাকতে থাকতেই প্রয়োজনে নির্বাচন করে নেবে দলটি। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের ভেতরে আছে, সেটা নির্দিষ্ট মেয়াদেও হতে পারে, আবার আগামও হতে পারে। সভা-সমাবেশে ও বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ নেতারা আগাম নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও তা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এটা রুটিন ওয়ার্ক। সারা বছরই আমাদের নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ চলে। এইউএ/এএইচ/এবিএস
Advertisement