• রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের অপেক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন • জকসু প্রণয়নে নতুন কমিটি হলেও নির্বাচনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত• দ্রুত জকসু নির্বাচনের দাবি শিক্ষার্থীদের• শিক্ষার্থীদের মতামত চাইলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি
Advertisement
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হয়ে অনুমোদনের পরই জকসু নির্বাচন আয়োজন শুরু করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে জকসু নীতিমালা দীর্ঘদিন ধরে চূড়ান্তের অপেক্ষায় ঝুলে থাকলেও নেই অগ্রগতি। এদিকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন’-এ ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত কোনো আইন না থাকায় এখন পর্যন্ত জকসু নির্বাচন সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। তবে চলতি বছরে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো জকসুর জন্য একটি খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করা হয়। এরপর সিন্ডিকেটের নির্দেশে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এরই মধ্যে খসড়া নীতিমালা করেছে।
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের বয়সসীমা নিয়ে নানা মতবিরোধ থাকলেও সর্বোচ্চ বয়স ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত শিক্ষার্থীরা ২৫-২৬ বছর বয়সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত অনার্স ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। দীর্ঘ গ্যাপ দেওয়া পরীক্ষার্থী, এমফিল, পিএইচডি বা গবেষণায় যুক্ত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
Advertisement
‘শুধু খসড়া তৈরি করলেই হবে না, এটি ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে এবং দ্রুত আইনে সংযুক্ত করতে হবে।’ – জবি ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব
এদিকে নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন না হওয়ায় এবং নির্বাচন আয়োজনে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
আরও পড়ুন
ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর আবারও পেছালো জাকসু নির্বাচন, নতুন তারিখ ঘোষণা রাকসু নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর জকসু রোডম্যাপসহ তিন দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের সংবাদ সম্মেলনএ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু খসড়া তৈরি করলেই হবে না, এটি ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে এবং দ্রুত আইনে সংযুক্ত করতে হবে।’
Advertisement
জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা শিক্ষার্থীরাই তুলে ধরতে পারে। তাই জকসু নির্বাচনে বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
আরও পড়ুন
জকসু নির্বাচন চান ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রাকসু নির্বাচন ঘিরে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র হচ্ছে: রাবি ছাত্রদল আহ্বায়ক ডাকসু নির্বাচন : প্রার্থী হতে পারবেন যারা ডাকসু নির্বাচন, হলে প্রবেশে কড়াকড়িইসলামী ছাত্রশিবিরের জবি শাখার সভাপতি মো: রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘জকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের যেকোনো টালবাহানা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় তফসিল ঘোষণা করলেও জবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ সব কার্যক্রম শেষ করে জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। যদি তারা এতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। প্রয়োজনে প্রশাসনকে ছাত্রসমাজের মুখোমুখি হতে হবে। প্রশাসনের প্রতি আমাদের স্পষ্ট অনুরোধ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেন নেওয়া না হয়।’
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস ছাড়া কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সেই কারণে ছাত্রদলের দাবি আগে বিচার ও সংস্কার, তারপর জকসু নির্বাচন। ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার পরই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’ - জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল
জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘জকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি এবং ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার। তবে বিগত ১৭ বছরে যারা ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের মাধ্যমে ছাত্রদের কণ্ঠরোধ করেছে, তারা এখনও বিভিন্নভাবে সক্রিয়। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস ছাড়া কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সেই কারণে ছাত্রদলের দাবি আগে বিচার ও সংস্কার, তারপর জকসু নির্বাচন। ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার পরই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির কাজ শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে চলতি বছরের ৭ মে একটি নতুন কমিটি গঠন করে। এ কমিটি জনমত যাচাই করে চূড়ান্ত মতামত গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়। এই নতুন কমিটিতে রয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দীন খান, জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছউদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেল ল’ইয়ার মোঃ ইব্রাহিম এবং রেজিস্ট্রার দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস।
‘জকসুর নীতিমালার খসড়া অনেকটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মতো। কিন্তু জবি ও ঢাবির বাস্তবতা এক নয়। তাই ঢাবির অনুকরণে নীতিমালা মানানসই হবে না। শিক্ষার্থীদের মতামত আহ্বান করা হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।’ -জকসু প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দীন খান
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও জকসু প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দীন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘জকসুর নীতিমালার খসড়া অনেকটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মতো। কিন্তু জবি ও ঢাবির বাস্তবতা এক নয়। তাই ঢাবির অনুকরণে নীতিমালা মানানসই হবে না। শিক্ষার্থীদের মতামত আহ্বান করা হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে সরাসরি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় একে সংবিধি হিসেবে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ আমাদের এখনো কোনো আইন নেই। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সংশোধিত খসড়া ইউজিসি, মন্ত্রণালয় ও চ্যান্সেলরের দপ্তর হয়ে অনুমোদনের জন্য যাবে। এটি সময়সাপেক্ষ হলেও টেকসই কাঠামো তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন
এবার জাকসু নির্বাচনের আগে সংস্কার চাইলেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা ডাকসু নির্বাচন: আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে হতে পারে জরিমানা-শাস্তি ডাকসু নির্বাচনে প্রচারে মানতে হবে যেসব নিয়ম অর্থছাড় হলেই আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা, হিসাব জুলাই থেকেসার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘জকসু নির্বাচন আয়োজন করতে আইন প্রণয়নসহ যাবতীয় কাজ প্রক্রিয়াধীন। নীতিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে সেটি হবে আইনের অংশ, তখনই আমরা জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে পারব।’
টিএইচকিউ/এমএমএআর/এমএস