ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-১ আসন। দুই উপজেলা শহরই পিছিয়ে পড়া জনপদ। বিশেষ করে তিস্তা নদী এখানকার মানুষের জন্য দুর্ভোগের মূল কারণ। এছাড়া সড়কের অবস্থাও করুণ। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে এ আসনের। বিএনপি ও জামায়াতের একক প্রার্থীর কারণে ভোটররা মনে করছেন এই দুই দলের মধ্যে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
Advertisement
এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপন ভাগনে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন এবং জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন দলটির জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা সামান্য লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই বললেই চলে। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এ আসনে একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ নেতারা এখন সদলবলে পলাতক। তাদের সহযাত্রী স্বৈরাচারের দোসর তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টিরও নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো তৎপরতা নজরে পড়ে না। এ কারণে এখন এ আসনে বিএনপি আর জামায়াত এই দুই দলের প্রার্থীকে ঘিরেই সর্বত্র চলছে আলোচনা।
ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ ছেড়েছিলেন সাবেক এমপি তুহিন। ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে। মাঝখানে কেটে গেছে ১৮ বছরের মতো। এতদিন পর তিনি ফিরে দেখলেন নির্বাচনী মাঠে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াত। এই এলাকায় জামায়াত এতটা শক্তিশালী ছিল না কখনই! এবার সাবেক এই এমপির ভোটের লড়াই হবে মূলত জামায়াতের সঙ্গেই।
ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ ছেড়েছিলেন সাবেক এমপি তুহিন। ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে। মাঝখানে কেটে গেছে ১৮ বছরের মতো। এতদিন পর তিনি ফিরে দেখলেন নির্বাচনী মাঠে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াত। এই এলাকায় জামায়াত এতটা শক্তিশালী ছিল না কখনই! এবার সাবেক এই এমপির ভোটের লড়াই হবে মূলত জামায়াতের সঙ্গেই।
Advertisement
এ আসনে বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছয়বার, জাতীয় পার্টি চারবার এবং উপ-নির্বাচনসহ বিএনপি তিনবার জয় পেয়েছে।
জামায়াত বা বিএনপি যে দলেরই প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন, এবার দুর্নীতিবাজ সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার থেকে এখানকার জনগণ মুক্তি পাবে। কারণ আফতাব ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হয়ে ভাই-ভাতিজা, জামাতা নিয়ে ‘আগুন খাওয়া’ টিম বানিয়ে শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। ডোমার-ডিমলার উন্নয়নে তার কোনো অবদান নেই।
ডোমার উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মিজানুল হক বলেন, আমার কাছে মনে হয় জামায়াত বা বিএনপি যে দলেরই প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন, এবার দুর্নীতিবাজ সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার থেকে এখানকার জনগণ মুক্তি পাবে। কারণ আফতাব ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হয়ে ভাই-ভাতিজা, জামাতা নিয়ে ‘আগুন খাওয়া’ টিম বানিয়ে শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। ডোমার-ডিমলার উন্নয়নে তার কোনো অবদান নেই। কারণ রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা, ভিজিডি, ভিজিএফ এগুলো যেই এমপি হোক এমনিতেই আসে। সরকারের নিয়মিত উন্নয়নের অংশ হিসেবে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত দুই দলই আশাবাদী বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনডিমলা উপজেলার স্কুলশিক্ষক আরিফুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনী এলাকার প্রায় সবকটি সড়কের অবস্থা করুণ। সড়কগুলোর অবস্থা দেখলেই পুরো নির্বাচনী এলাকার সড়কগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
Advertisement
এ আসনে প্রার্থীর জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর তিস্তা পাড়ের ভোটার। এ ভোটাররাই যে প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, জয়টা তার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে অনেক আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে দুদিনের তিস্তা বাঁচাও কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি অনেকটা সুবিধজনক স্থানে রয়েছে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদ মাত্র ১১ দিন স্থায়ী ছিল। ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে ২০০৮ সালে কর ফাঁকির মামলায় আদালত তাকে তিন ও পাঁচ বছর করে মোট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় ২০০৮ সালে তাকে দুটি ধারায় (৩ বছর ও ১০ বছর) ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল। এদিন আদালতে আত্মসমর্পণের পর ঢাকার পৃথক দুটি বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. কবির উদ্দিন প্রামাণিক ও প্রদীপ কুমার রায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ২০২৫ সালের ৮ মে হাইকোর্ট তার ‘আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তী জামিন’ মঞ্জুর করেন।
জামিনের পর তিনি নিজ এলাকায় এসে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। করছেন সভা, সমাবেশ ও উঠোন বৈঠক। দিচ্ছেন নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়নের নানান ফিরিস্তি। তাকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত।
আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণাঅন্যদিকে অনেক আগেই জামায়াত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তার আচরণ ও ব্যবহারে মানুষ মুগ্ধ। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা মনে করেন নির্বাচনী লড়াই হবে দ্বিমুখী। অন্য দল বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী এখানে জয় লাভ করতে পারবে না।
জামায়াতের জন্য আশার কথা হচ্ছে এখানকার হিন্দু ভোটারদের অনেকে তাদের সমর্থন দিচ্ছেন। সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে তাদের সম্প্রদায়ের নেতারা জামায়াতের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। এ কারণে যারা সাধারণ ভোটার রয়েছেন ভোটের হিসাব-নিকাশ কষতে পারছেন না। তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, হিসাব-নিকাশটা আরও সহজ হবে।
শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন দেশে থাকতে পারিনি। এবার দেশ ও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।
তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার উঠবে। কারণ সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি সরকারি দল হবে। আর সরকারদলীয় এমপি স্বাভাবিকভাবে এলাকার ইতিবাচক উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দর সাত্তার জানান, নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। তাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে দল ও মত ভুলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান তিনি।
নীলফামারী-১ হলো জাতীয় সংসদের ১২তম এবং জেলার প্রথম সংসদীয় আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৫। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৮২৯, নারী ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ২৬৪ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন।
এ আসনে প্রার্থীর জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর তিস্তা পাড়ের ভোটার। এ ভোটাররাই যে প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, জয়টা তার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে অনেক আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে দুদিনের তিস্তা বাঁচাও কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি অনেকটা সুবিধজনক স্থানে রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। এতে ডিমলা ও ডোমার এলাকার তিস্তাপাড়ের মানুষের ভাগ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে জামায়াতের জন্য আশার কথা হচ্ছে এখানকার হিন্দু ভোটারদের অনেকে তাদের সমর্থন দিচ্ছেন। সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে তাদের সম্প্রদায়ের নেতারা জামায়াতের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। এ কারণে যারা সাধারণ ভোটার রয়েছেন ভোটের হিসাব-নিকাশ কষতে পারছেন না। তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, হিসাব-নিকাশটা আরও সহজ হবে।
আরও পড়ুন লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত জোটে বদলে যেতে পারে ভোটের হিসাবনিকাশএ আসনে এবার তরুণ ভোটার রয়েছে প্রায় ১০-১২ শতাংশ। যারা এবার প্রথম ভোট দেবেন। তারা বলছেন, মার্কা নয়, ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে তাদের মূল্যবান ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো দল প্রাধান্য পাবে না।
আসিফ ইসলাম, ফিরোজ আলম ও রবিউল ইসলাম নামে কয়েকজন তরুণ ভোটার জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো, এটার অনুভূতিটাই অন্যরকম লাগছে।
তবে এলাকার উন্নয়নে যে প্রার্থী ভালো ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন। এজন্য ওই প্রার্থীর অতীত ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট চিন্তা করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানান তরুণ ভোটাররা।
এএইচকিউ/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস