ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টেসলার জন্য গত ১৮ মাস ছিল এক অবাক করা উল্টো যাত্রা। ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত এই বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির মাত্র একটি প্রান্তিকেই আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কমেছিল। কিন্তু এখন তারা টানা দুই প্রান্তিকে অন্তত ১৩ শতাংশ বিক্রির পতনের মুখে পড়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে তাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
Advertisement
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে টেসলার বিক্রি কমেছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। এর আগের প্রান্তিকেও এমন পতন দেখা গেছে। প্রথম প্রান্তিকে বিক্রির পতনের জেরে নিট মুনাফা কমে গিয়েছিল ৭১ শতাংশ। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে টেসলার মুনাফা আরও ২৪ শতাংশ কমে প্রায় ৩৫ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।
আরও পড়ুন>>
ইলন মাস্কের টেসলাকে ছাড়িয়ে গেলো চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি যন্ত্রাংশ সংকটে বন্ধ টেসলার কারখানা ট্রাম্প-ইলন মাস্কের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, একে অপরের বিরুদ্ধে হুমকি ইউরোপে টেসলার বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে, কারণ ইলন মাস্কের রাজনীতি!বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতার মর্যাদা ধরে রাখাও এখন টেসলার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী বিওয়াইডি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যা টেসলার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
Advertisement
আগামী অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইভি কেনার ক্ষেত্রে ৭ হাজার ৫০০ ডলারের করছাড় তুলে নেওয়া হবে। এতে বিক্রি আরও কমে যেতে পারে। টেসলার মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রে হয়। বিক্রি ধরে রাখতে হলে টেসলাকে আবারও দাম কমাতে হতে পারে, ফলে মুনাফার হার কমবে।
যদিও টেসলা যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি তৈরি করে বলে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক থেকে বাঁচে, তবু তারা যে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানি করে, সেগুলোর ওপর এখন ট্যারিফ বসছে। যেমন, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন টেসলার ব্যাটারিতে ব্যবহৃত চীনা গ্রাফাইটের ওপর নতুন করে শুল্ক বসিয়েছে, এতে তার দাম এক বছরের ব্যবধানে ১৬০ শতাংশ বেড়েছে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা রেগুলেটরি ক্রেডিটের বাজারে২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে টেসলা ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ‘রেগুলেটরি ক্রেডিট’ বিক্রি করে। গ্যাসচালিত গাড়ি নির্মাতারা পরিবেশগত সীমা পূরণে টেসলার কাছ থেকে এই ক্রেডিট কিনতো। কিন্তু নতুন রিপাবলিকান কর ও ব্যয়ের বিল সেই জরিমানার শাস্তি তুলে দিয়েছে। এখন যারা নির্গমন সীমা অমান্য করলেও আর্থিক শাস্তির মুখে পড়বে না, ফলে টেসলার এই বিক্রির উৎস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
প্রথম প্রান্তিকে এই ক্রেডিট বিক্রি না থাকলে টেসলা আসলে লোকসানে পড়তো।
Advertisement
টেসলা সিইও ইলন মাস্ক এখন বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে চাচ্ছেন—রোবোট্যাক্সি এবং মানবাকৃতি রোবটের দিকে। জুনে অস্টিনে পরীক্ষামূলক রোবোট্যাক্সি চালু হয়েছে, তবে তা শুধুই পরিচিতমহলে। বাস্তবিক অর্থে এটি লাভজনক হতে এখনো বছর লাগতে পারে।
আরেকটি অজানা উপাদান হলো মাস্কের রাজনৈতিক পদক্ষেপ। তিন মাস আগে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়ে তিনি পূর্ণ সময় টেসলায় মনোযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেই ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে নতুন একটি তৃতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন মাস্ক এবং তা কোম্পানির ভবিষ্যতের ওপর নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
সূত্র: সিএনএনকেএএ/