পাকিস্তানি পেসার সালমান মির্জার বলে ১৭ নম্বর ওভারের শেষ বলে শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে জাকের আলী অনিকের ক্যাচ ফেলে দিলেন খুশদিল শাহ। ৩২ রানে দাঁড়িয়ে ফুল লেন্থ ডেলিভারিকে ফাইন লেগে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন জাকের আলী। বল শর্ট লেগে দাঁড়ানো খুশদিল শাহর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার তা দু’হাতে নিয়েও ফেলে দিলেন।
Advertisement
বাংলাদেশের রান তখন দলীয় ১০১। সেই ক্যাচটি তালুবন্দি হলেই হয়তো ১১০-এর মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু তা হয়নি। ওই জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি জাকের আলী অনিক। অন্যপ্রান্তে আর কেউ তাকে সেভাবে সহযোগিতা করতে পারেননি। তাতে কি! জাকের আলী একাই লড়াই চালিয়ে যান। ইনিংসের একদম শেষ বল পর্যন্ত খেলে দলকে ১৩০ পার করেন তিনি।
এই পথে হাঁটতে নিজের ৩২ নম্বর টোয়েন্টি ম্যাচে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতকও পূরণ করেন সিলেটের এ সুঠামদেহী ক্রিকেটার। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার আব্বাস আফ্রিদির বলে লং অনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪৮ বলে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দেন জাকের আলী।
১০১ থেকে ১৩৩; এই ৩২ রানের মধ্যে শুধু জাকেরের ব্যাট থেকেই আসে ২৩ রান। যার ১৮ রানই আসে ছক্কা থেকে। শেষ ওভারেও আব্বাস আফ্রিদিকে বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি।
Advertisement
জাকের আলীর ইনিংসটি বাদ দিলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারদের ব্যাটিং ছিল চরম হতাশার। চার টপ অর্ডার নাইম শেখ, পারভেজ ইমন, অধিনায়ক লিটন দাস আর তাওহিদ হৃদয় দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাট করেছেন। তাওহিদ হৃদয় ছাড়া বাকি তিনজন উইকেটের গতি না ঠাউরে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন।
তানজিদ তামিমের বদলে খেলার সুযোগ পেয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেন নাইম শেখ। ওপেন করতে নেমে বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৩ রান করে পাকিস্তানি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার ফাহিম আশরাফের বলে রিভার্স স্কুপ খেলতে গিয়ে বোকার মত উইকেটের পিছনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন নাইম শেখ।
পারভেজ হোসেন ইমনও সুবিধা করতে পারেননি। ১৩ রানে মিড অনের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। অধিনায়ক লিটন দাসও দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দেননি। উইকেটে বল খানিক থেমে আসে। তা জানার বোঝার পরও অফস্ট্যাম্পের কিছুটা খাট লেন্থের বলকে টেনে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
অন্যদিকে তাওহিদ হৃদয় রান আউট হন। ফুল লেন্থ ডেলিভারিকে মিড অফে ঠেলে সিঙ্গেলস নিতে গিয়ে যথা সময়ে ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি হৃদয়। ২৮ রানে ৪ টপ অর্ডারকে হারানোর পর বাংলাদেশকে ম্যাচে ধরে রাখেন জাকের আলী অনিক।
Advertisement
সঙ্গী শামীম পাটোয়ারী (১), তানজিম সাকিব (৭), রিশাদ (৭), শরিফুল (১) এতটুকু সহায়তা করতে না পারলেও জাকের আলী অনিক একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি আলগা বলের অপেক্ষায় থেকে সেগুলোকে বাতাসে ভাসিয়ে ছক্কা হাঁকানোই ছিল তার ব্রত। আর তাতে সফলও হন তিনি। ৫টি ছক্কা হাঁকালেন জাকের।
তার একার লড়াইয়েই বাংলাদেশ পায় ১৩৩ রানের পুঁজি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটা একেবারেই কম রান। কিন্তু শেরে বাংলার যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেখানে এটা মোটেই কম রান নয়। রীতিমত লড়াকু পুঁজি।
বছর চারেক আগে (২০২১ বিশ্বকাপের আগে) অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে এর চেয়ে ১০/১২ রান কম করেও বাংলাদেশের একাধিক জয়ের নজির আছে। বল একটু থেমে আসে। শক্তি খাটিয়ে ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘ফোর্স ’ করে মারতে গেলে টাইমিং করা কঠিন।
এ পিচে প্রথম ম্যাচের হাত খুলে খেলতে গেলে পাকিস্তানিদের আরও সমস্যা হতে পারে, জানাই ছিল। সেটিই হয়েছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলাররা এই পুঁজি নিয়ে ইতিহাসগড়া সিরিজ জয় এনে দিতে পারেন কিনা!
এআরবি/আইএইচএস/এমএস