চাঁদপুরের মতলব থেকে মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ হোসাইন ও মোহাম্মদ জাফর নামে তিন বন্ধু এসেছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখার জন্য। মিরপুর স্টেডিয়ামের ১ নাম্বার গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। খেলা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে পৌঁছে গেলেও গ্যালারিতে প্রবেশের জন্য যেন তাদের তর সইছিল না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটছিল। দু’জনের গায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি এবং একজনের গায়ে ক্রিকেট দলের জার্সি।
Advertisement
হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে থাকলেও একজনের হাত চেপে ধরে দাঁড় করালাম। তার দেখাদেখি বাকি দু’জনও দাঁড়িয়ে পড়লো। কেন ফুটবলের জার্সি পরে ক্রিকেট দেখতে এসেছেন?
জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ফুটবল- দুটোকেই ভালোবাসি। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে ক্রিকেট। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে তাই চাঁদপুরের মতলব থেকে এসেছি দ্বিতীয় ম্যাচটি দেখতে। ‘
তিনজনের মধ্যে দু’জন কেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি পরলেন? অন্যজন কেন নয়? মোহাম্মদ হোসাইন বললেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন ভালো খেলতেছে। হামজা-শামিত সোমরা এসেছে। ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য এই জার্সি কিনেছি। ভালো লাগে তাই পরি। আর জাফর ক্রিকেট দলের জার্সি পরেছে, যেন মাঠে এসেছি, ক্রিকেটের আমেজটা থাকে। গায়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি থাকলেও আমাদের হৃদয়ে কিন্তু ক্রিকেটই।’
Advertisement
চাঁদপুরের মতলব থেকে আসা এই তিন বন্ধুই শুধু নন, মিরপুর শেরে বাংলায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম টি-টোয়েন্টি এবং আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে আসাদের মধ্যে প্রচুর দর্শক এসেছেন, যাদের গায়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নীল-সাদা জার্সি।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে আবেদন কিংবা আগ্রহ- সবই এক সময় নেমে এসেছিল তলানীতে। কিন্তু ফিনিক্স পাখির মত যেন এ দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তুললেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক। যিনি খেলতেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। হামজা চৌধুরী। তার একার ক্রেজেই যেন জেগে উঠেছে বাংলাদেশের ফুটবল। দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে বাংলাদেশের ফুটবল। এরপর যুক্ত হলেন কানাডা প্রবাসী শামিত সোম, ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুল ইসলাম।
সব মিলিয়ে দর্শক আগ্রহ যখন তুঙ্গে, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। এ সুযোগটা কাজে লাগালো বাফুফে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি ছাড়লো বাজারে। বাফুফে কর্তৃক বাজারে ছাড়া জার্সি হোক কিংবা সাধারণ দোকানে কপি জার্সি হোক- দেদারছে বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি।
একসময় পথে-ঘাটে দেখা যেতো কিশোর-তরুণ, যুবক শ্রেণিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি পরতে। ফুটবলের জার্সি যদি কেউ পরে বের হতেন, তাহলে সেটা হতো ভিনদেশি জার্সি। হয়তো ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা। কিংবা ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানইউ, ম্যানসিটি কিংবা লিভারপুলের জার্সি পরছে। কিন্তু সব জায়গাতেই অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি।
Advertisement
তবে এবার হামজা-শামিত সোমদের কল্যাণে সেই জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি পরেও সারাদিন রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়ায় ক্রীড়াপ্রেমীরা। তারাই জাতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে চলে এসেছে ফুটবল দলের জার্সি পরে।
ধামরাই থেকে আসা রকিবুল হাসান শিহাব পড়েন দেবেন্দ্র কলেজে। বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে কেন ক্রিকেট দলের ম্যাচ দেখতে এসেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটই বেশি ভালো লাগে। তবে, এখন ফুটবলকেও ভালোবাসি। হামজা চৌধুরীর খেলা দেখতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি কিনেছিলাম। এখন সেটা পরেই ক্রিকেটের ম্যাচ দেখতে চলে এসেছি।’
কুমিল্লা থেকে আসা শাহজালালও প্রায় একই কথা জানালেন। তিনি আবার বললেন, ‘আমার কাছে অন্য কোনো জার্সি নেই। ক্রিকেট দলের জার্সি থাকলে হয়তো ওটা পরে আসতাম। তবে ফুটবল দলের এই জার্সিটা ভালো লাগে, তাই পরে এসেছি।’
পাবনা থেকে একসঙ্গে খেলা দেখতে এসেছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে রাকিব হোসেন, মোহাম্মদ দ্বীপ ও মোহাম্মদ আকাশ বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি পরেই এসেছেন খেলা দেখতে। তারাও প্রায় একই কথা জানালেন। বললেন, ‘এখন বাংলাদেশের ফুটবল খেলা দেখতেও ভালো লাগে। এ কারণেই এ জার্সি কিনেছিলাম। তবে, ক্রিকেট আমাদের হৃদয়ে। আমরা ক্রিকেটকেই বেশি ভালোবাসি। ফুটবলের জার্সি পরে এলেও আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই বেশি উপভোগ করি।’
আইএইচএস/এমএমআর/এএসএম